পারভেজ অপহরণ

অপহরণের শিকার অন্য ব্যক্তিদের চেয়ে পারভেজ সরকারের কপাল ভালো বলতে হবে। অপহরণের আট ঘণ্টা পর অপহরণকারীরা তাঁকে অক্ষত অবস্থায় বাড়ি ফিরে যেতে দিয়েছে। এটি স্বস্তির কথা। কিন্তু খোদ রাজধানীতে দিনদুপুরে কীভাবে এই অপহরণের ঘটনা ঘটল, কারা ঘটাল, কেন ঘটাল, কী পরিস্থিতিতে অপহরণকারীরা তাঁকে ছেড়ে দিল, সেসব প্রশ্নের উত্তর অজানাই রয়ে গেছে।

গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর আওয়ামী লীগ নেতা ও তিতাস উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান পারভেজ সরকার জুমার নামাজ শেষে যখন তাঁর ধানমন্ডির বাসায় হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখনই একদল লোক তাঁকে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তিনি ‘বাঁচাও’ ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকার করলেও কোনো কাজ হয়নি। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী ও অন্যরা এগিয়ে আসার আগেই অপহরণকারীরা তাঁকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। সিসি ক্যামেরায় এসব দৃশ্য ধরা পড়েছে।

পারভেজ সরকারের ভাষ্য হলো, তিনি আগামী নির্বাচনে কুমিল্লার তিতাসে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এ কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশ তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল। তাঁর দাবি, এসবি (পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ) পরিচয়ে তাঁকে তুলে নেওয়া হয়েছিল।

এখানে প্রথমেই যে প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা দরকার তা হলো, সত্যি সত্যি এসবির কোনো সদস্য/সদস্যরা তাঁকে তুলে নিয়েছিলেন, না এসবির নাম ভাঙিয়ে অন্য কেউ এই অপকর্ম করেছে। সাম্প্রতিক কালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম ব্যবহার করে এ রকম অপহরণের ঘটনা আরও ঘটেছে। জামালপুরের সরিষাবাড়ীর মেয়র রোকনুজ্জামানের পর পারভেজ হলেন ক্ষমতাসীন দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি নাটকীয়ভাবে অপহৃত হলেন এবং ছাড়াও পেলেন। কিন্তু অপহৃত হওয়ার পর অনেকেরই খোঁজ মেলেনি। কেউ কেউ চিরতরে নিখোঁজের তালিকায় রয়ে গেছেন।

নারায়ণগঞ্জে সাত হত্যার মতো ঘটনায় র‍্যাবের মতো এলিট বাহিনীর সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণও মিলেছে। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন তাঁর প্রতিপক্ষ নজরুল ইসলামকে (তিনিও আওয়ামী লীগ নেতা) অপহরণ ও হত্যা করতে র‍্যাব সদস্যদের ব্যবহার করেছিলেন। আর সেই অপহরণের ঘটনা দেখে ফেলায় আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে জীবন দিতে হলো। নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় র‍্যাব সদস্যসহ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে; যদিও মামলাটি উচ্চ আদালতে আপিলে থাকায় চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।

সিসি টিভির ফুটেজ দেখেই পারভেজ অপহরণকারীদের চিহ্নিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, অপহরণকারী তাঁকে যেখানে নিয়ে গিয়েছিল, সেই জায়গাটির সন্ধান  বের করা গেলেও অপহরণকারীদের খুঁজে বের করা সহজ হতে পারে। সরকার যদি অপহরণকারীদের খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়, সন্দেহের তির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দিকেই ধাবিত হবে। অপহরণকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হোক বা বাইরের কেউ হোক, সেটি বের করাই সরকারের দায়িত্ব। তাঁরা যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও হন, তার অর্থ এই নয় যে পুরো বাহিনী এই দুষ্কর্ম করেছে। বরং অপরাধীদের চিহ্নিত করতে না পারলে বাহিনীর ওপরই দায় বর্তাবে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তাঁর অপহরণের পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে, যা তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও বলেছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষই কাজটি করেছে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু সেই কাজটি তারা ভাড়াটে অপরাধীদের দিয়ে করিয়েছে, না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সংস্থা বা সদস্যের সহায়তা নিয়েছে, সেই রহস্য উদ্‌ঘাটন করা জরুরি। সরকার এই কাজ করতে ব্যর্থ হলে নির্বাচন সামনে রেখে আরও অনেক অঘটন ঘটতে পারে, যা কারও কাম্য নয়।

 পারভেজ অপহরণকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।