পুলিশের ডোপ টেস্ট

সম্পাদকীয়

পুলিশ বিভাগে মাদকাসক্তদের সন্ধান পাওয়ার ঘটনা গভীর উদ্বেগজনক। অবশ্যই এটা প্রশংসনীয় যে পুলিশের ভেতরে ডোপ টেস্ট চালানো হয়েছে। এবং তাতে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত হওয়া ৬৮ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। আমরা পুলিশ বিভাগে এ ধরনের শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাই। এটা আশবাদ তৈরি করেছে যে সদিচ্ছা থাকলে যথা পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।

এখন প্রথমেই যেটা বলা দরকার সেটা হলো, এ ঘটনাকে টিপ অব দ্য আইসবার্গ বা প্রকাণ্ড বরফখণ্ডের ভাসমান ক্ষুদ্রাংশ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। পুলিশের নীতিনির্ধারকেরা যেহেতু স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই পদক্ষেপ নিতে পেরেছেন, তাই আশা করা যায়, পুলিশের অভ্যন্তরে এই পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হবে। কিন্তু এটা এখন এই প্রশ্নকে জ্বলন্ত করছে যে অন্যান্য সরকারি সংস্থা, বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কী ঘটতে পারে। বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে নিয়মিত বিরতিতে ডোপ টেস্টের বিষয়টি সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য বাধ্যবাধকতা কিংবা একে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যায় কি না, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ, সব প্রতিষ্ঠানের জন্য ডোপ টেস্ট একটি রুটিন ব্যবস্থায় পরিণত করলে এতে অংশ নিতে কারও অযথা বিব্রত হওয়ার বিষয় থাকবে না।

স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে যৌথভাবে উদ্যোগী হয়ে সারা দেশের সরকারি এবং তার নিয়ন্ত্রণাধীন অফিসগুলোতে অবিলম্বে একটা শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা নিশ্চিত করার আর কোনো বিকল্প থাকতে পারে না।

এই প্রসঙ্গে আমরা স্মরণ করতে পারি, গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল খ্যাত (মিয়ানমার, চীন, লাওস, থাইল্যান্ড) অঞ্চলটি করোনার মধ্যে মাদক চোরাচালানকারীদের নেটওয়ার্ক আরও বেশি বিস্তৃত হয়ে চলছে। গত মাসে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ইতিহাসের বৃহত্তম মাদকের চালান ধরেছে। এর মধ্যে নতুন সিনথেটিক মাদক মেথামফটেমিনস (১৯০ মিলিয়ন ট্যাবলেট) অন্যতম। িময়ানমার কর্তৃপক্ষ বলেছে, এসবের গন্তব্য প্রতিবেশী দেশগুলো ছিল। আমরা স্মরণ করতে পারি, এর আগে এই প্রথম জিগাতলায় মেথামফটেমিনস তৈরির কারখানা শনাক্ত হয়। আসামের পুলিশ বিভাগের প্রধান মধ্য নভেম্বরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের চিহ্নিত রুটের মধ্যে বাংলাদেশ সীমান্ত রুট অন্যতম। গত বছরেই বিজিবির মহাপরিচালক ও র‍্যাব নিশ্চিত করেছে, দেশে মাদকের নতুন রুট সিলেটের চারটি সীমান্ত।

উপরন্তু ২০১৮ সালে বিশেষ অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী অভিযুক্ত ৪৬৬ জন যেভাবে বন্দুকযুদ্ধের শিকার হন, সেটা প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে মাদকের থাবা বিস্তারের ক্ষেত্রে কতটা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা আরও স্মরণ করতে পারি, মাদক মামলার বিচারের গতি অপেক্ষাকৃত বেশি মন্থর। প্রতি মাসে ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার নতুন মাদক মামলা আদালতের সামনে যাচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে বড় কোনো পরিবর্তন আনা যাবে, সেটাও মনে হচ্ছে না। এ রকম অবস্থায় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি অফিসগুলোর ওপর কড়া নজরদারি বাড়াতে হবে।

এটা প্রমাণিত যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ভ্রাম্যমাণ আদালতের ঝটিকা বিচারের মতো পদক্ষেপগুলো আমাদের মাদকের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিচ্ছে না। সরকারকে অবশ্যই সর্বাত্মক মাদকবিরোধী অভিযানে নিয়মিতভাবে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। এটা সময়ে সময়ে বা অ্যাডহক ভিত্তিতে করলে সেটা আত্মঘাতী হবে।

পুলিশ বিভাগ যেভাবে ডোপ টেস্ট ব্যবস্থা চালু করেছে, সেটা অবিলম্বে কীভাবে সম্প্রসারণ করা যায়, সেই বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই যথা পদক্ষেপ নিতে হবে। পুলিশের যাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে, সেটা যেন কোনোভাবেই থমকে না যায়।