পেঁয়াজের দাম

ঠিক এক বছরের মাথায় পেঁয়াজের বাজার আবার অস্থির হয়ে উঠেছে। সোমবার থেকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় বাংলাদেশে দাম দ্রুত বাড়ছে। এই মূল্যবৃদ্ধির লাগাম এখনই টেনে ধরা প্রয়োজন; নইলে পেঁয়াজ নিয়ে গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

গত বছর নভেম্বরে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দাম বাড়ার শুরুটা হয়েছিল ভারত থেকে সরবরাহ বন্ধ হওয়ায়। ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল। তখন অন্যান্য দেশ থেকে আকাশপথেও পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়েছিল। অনেক পরিবারে পেঁয়াজ ছাড়াই রান্নার চর্চা শুরু হয়েছিল। দৃশ্যমান কিছু চেষ্টা করলেও তখনকার পরিস্থিতি সরকার সামাল দিতে পারেনি।

কিছুদিন ধরে ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ছিল। প্রতিবেশী দেশে দাম বাড়ার এই প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল বাংলাদেশের বাজারেও। কিন্তু ভারত পূর্বঘোষণা ছাড়াই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় চাহিদা ও জোগানে বড় রকম ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পেছনে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়া এবং তাদের আকস্মিকভাবে রপ্তানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দায়ী।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়তে মঙ্গলবার এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকায়। এই হিসাবে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি কমবেশি ১০০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। এক মাস আগেও দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকার মধ্যে ছিল।

দাম বাড়ার আরেকটি কারণ গুজব বা আশঙ্কার কারণে মজুত করার প্রবণতা। দাম বাড়তে শুরু করলে মজুতও বাড়তে থাকে। সংকটের সময় একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আটঘাট বেঁধে নামে। আবার সাধারণ মানুষও তাঁদের সাধ্য অনুযায়ী মজুত বাড়ানোর চেষ্টা করেন। ফলে যতটুকু ভোগ্যপণ্য স্বাভাবিক সময়ে প্রয়োজন, সংকটের সময় সেই চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী। আমরা পেঁয়াজসহ অনেক ভোগ্যপণ্য ভারত থেকে আমদানি করি। পারস্পরিক বাণিজ্যে আলোচনা, সমঝোতা বা সহানুভূতির বিকল্প নেই। ভারত এ রকম আকস্মিকভাবে রপ্তানি বন্ধ না করে পেঁয়াজ আমদানিকারকদের সময় বেঁধে দিতে পারত। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এ দেশে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয়েছে।

আমাদের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের মজুত আছে। রপ্তানি বন্ধ বা দাম বাড়ার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এবার আগেভাগেই অনেক ব্যবসায়ী আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্বের ৫টি দেশ থেকে প্রায় ১২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে ২৫টি প্রতিষ্ঠান।

এখন করোনাভাইরাসে এমনিতেই মানুষের জীবন বিপর্যস্ত, প্রায় সব মানুষের আয় কমেছে। চিকিৎসা, নিরাপত্তাসামগ্রীসহ নানা খাতে খরচ বেড়েছে। এর মধ্যে ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিঃসন্দেহে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলবে।

পেঁয়াজের সরবরাহে ঘাটতি পড়বে এবং দাম বাড়তে পারে—এই আশঙ্কা কিন্তু আগেও ছিল, এখনো আছে। গত বছরের মতো সংকটের পুনরাবৃত্তি এড়াতে এখনই পেঁয়াজ আমদানির পথগুলো সহজ ও সুগম করা দরকার। প্রয়োজনে প্রণোদনা দিতে হবে, আমদানি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা কমাতে হবে। আর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট যেন পরিস্থিতির সুযোগ নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ ও মজুতদারি রোধের কঠোর উদ্যোগ নিতে হবে। দাম আরও বাড়বে, এই আশঙ্কায় সাধারণ মানুষও যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেঁয়াজ মজুত না করেন, সেদিকেও লক্ষ রাখা প্রয়োজন। সবার স্বার্থে সবার মনে রাখা উচিত, সংকটের সময় যতটুকু প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি পণ্য কেনার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া ঠিক নয়।