পৌরসভা ভোটের দ্বিতীয় পর্ব

সম্পাদকীয়

পৌরসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বের ফলাফল প্রথম পর্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এসেছে। প্রথম পর্বে ২৬টি পৌরসভায় নির্বাচন হয়েছিল, যার মধ্যে ১৬টিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ এবং ২টিতে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হন। দ্বিতীয় পর্বে ৬০টির মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ৪৬টি এবং বিএনপির প্রার্থী ৪টিতে জয়ী হন। স্বতন্ত্র ও অন্য প্রার্থীরা জিতেছেন ৯টিতে।

নাগরিকদের ভোটাধিকার রক্ষার যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের পদাধিকারীরা দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তাঁরা তা রক্ষা করতে পারেননি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পূর্বশর্ত নির্বাচনী প্রচার থেকে ভোট গ্রহণ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা মাঠ সমতল রাখা। কিন্তু উদ্বেগের সঙ্গে দেশবাসী লক্ষ করেছে যে প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও পৌরসভা নির্বাচনে একতরফা প্রচার হয়েছে, ভোটকেন্দ্রেও দলবিশেষের একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় ছিল। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা যদি মাঠ থেকে সরেও গিয়ে থাকেন, তা স্বেচ্ছায় যাননি; যেতে বাধ্য হয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ছিল প্রতিদ্বন্দ্বী সব পক্ষকে সুরক্ষা দেওয়া এবং আইন মেনে চলতে বাধ্য করা। তারা সেই দায়িত্বটা পালন করেনি বলেই দ্বিতীয় পর্বের পৌরসভা নির্বাচনেও নানা অঘটন, হানাহানি, মারামারি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেদনাদায়ক হলো সন্ত্রাসীদের হাতে সিরাজগঞ্জে একজন বিজয়ী কাউন্সিলর প্রার্থীর খুন হওয়া। ভোটের আগেও একজন কাউন্সিলর প্রার্থী ও অপর এক প্রার্থীর ভাই খুন হয়েছেন। ফলে কমিশন নাগরিকের ভোটাধিকার রক্ষা করতেই ব্যর্থ হয়নি, ব্যর্থ হয়েছে প্রার্থীর নিরাপত্তা দিতেও। তাদের এ অক্ষমতা ও নিষ্ক্রিয়তা অমার্জনীয় বলে মনে করি।

নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শুরু থেকে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন, যাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা নির্বাচনের মাঠ সমতল ছিল না। জয়পুরহাটে দলীয় সভা থেকে বিএনপির ২৩ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা কিংবা আখাউড়ায় নির্বাচনের আগে পুলিশ বিএনপির নেতাদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালালেও নির্বাচন কমিশন কোনো প্রতিকার করেনি। শনিবার ভোটকেন্দ্রগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের একতরফা মহড়া লক্ষ করা গেছে। বেশির ভাগ কেন্দ্রে বিএনপির নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন না। সাভার পৌরসভার কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের সচিব দাবি করেছেন, দু-একটা নগণ্য ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুন্দর হয়েছে। জনগণ কার কথা বিশ্বাস করবে?

নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পৌরসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বে ভোটারদের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু থাকলে ভোটার উপস্থিতি যে আরও বেশি হতো, নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার ফলাফলই তার প্রমাণ। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা বিপুল ভোটে জয়ী হলেও প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী কারচুপির বা জালিয়াতির অভিযোগ করেননি। বসুরহাটে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, তার পেছনে আবদুল কাদের মির্জার সত্যভাষণ অবদান রেখে থাকতে পারে। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘কারচুপি করে জিতব না, কারচুপি করে কাউকে জিততেও দেব না।’

সামনে আরও তিন পর্বে পৌরসভা নির্বাচন আছে। নির্বাচন কমিশন যদি আত্মতৃপ্তিতে না ভুগে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেয় এবং নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকে, তাহলে নির্বাচনী ব্যবস্থাটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেত।