প্রকল্পের বরাদ্দ লোপাটের চেষ্টা বন্ধ হোক

সম্পাদকীয়

সরকারের নানা উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা নতুন কিছু নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সেসব খবর আমরা পাই। ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও অর্থ লোপাট বা অপচয় ঠেকানো আর সম্ভব হয় না। সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় একটি প্রকল্পের শুরুতে জমি কেনার মধ্য দিয়ে অনিয়মের প্রচেষ্টা চলছে। সেখানে একটি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের জন্য বিনা মূল্যে প্রায় দ্বিগুণ জমি দিতে চান এলাকাবাসী। কিন্তু প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের নামে সরকারি বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন সরকারি দলের একজন নেতা।

এক সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের স্থানীয় সাংসদ মোকাব্বির খান অভিযোগ করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনের তিন একরের প্রায় দ্বিগুণ জমি বিনা মূল্যে এলাকাবাসী দিতে চান। অথচ তা না নিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি অধিগ্রহণের কথা ভাবা হচ্ছে। এর জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আফজালুর রহমান চৌধুরী ৬০ শতক জমিও কিনেছেন। পুরো বিষয়টির সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা ও ভূমি ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট।

একটি আবাসন কোম্পানির অবিক্রীত জমি সরকারিভাবে অধিগ্রহণের তোড়জোড় করছেন আফজালুর। সেখানে জমি কিনেছেন জানালেও সিন্ডিকেটের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি। এলাকাবাসী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য যে জায়গাটি দিতে চেয়েছেন, সেটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের এ প্রকল্পের জমিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে খাস অথবা অব্যবহৃত জমি অধিগ্রহণ। বিকল্প হিসেবে সর্বশেষ ৪ নম্বর অগ্রাধিকারে বলা হয়, উপজেলা সদরের নিকটবর্তী ও যাতায়াত উপযোগী জায়গা। অথচ সর্বশেষ অগ্রাধিকারকেই গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। লক্ষ্য আবাসন কোম্পানির জমিটিই। জমিটি সদরের কাছে হলেও মহাসড়ক থেকে দূরে জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ রাস্তাও বড় করতে হবে।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে ভূমি নির্বাচন প্রসঙ্গে একটি চিঠিও দেওয়া হয় প্রশাসনকে। যেখানে জনগণের বিনা মূল্যের জমির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে প্রকল্পের জন্য অর্থ সাশ্রয়ী হবে। কিন্তু সিন্ডিকেটের প্রভাবে স্থানীয় প্রশাসন সেটি আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ সাংসদের।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমানেরও অভিযোগ, ‘আমাদের সেক্রেটারি (আফজালুর) ডাইরেক্ট ও ইনডাইরেক্ট ইনভলভ ওই চক্রে। বিষয়টির তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’ তবে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ কাজটি মাত্র প্রথম ধাপে আছে। অধিগ্রহণ চূড়ান্ত করার আগে অনেক যাচাই-বাছাই হয়। কিন্তু শুরুর আগেই যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তাঁর এমন মন্তব্যে আমরা আস্থা রাখতে চাই। জমি কেনার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল হোক।