প্রত্যন্ত এলাকায় সৌরবিদ্যুৎ

রাজশাহীর চর আষাঢ়িয়াদহ, চর মাজার দিয়া, চর খিদিরপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর আলাতুলিতে ছয় হাজার মানুষকে সৌরবিদ্যুৎ–সুবিধার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তারা নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের সুবিধার আওতায় আসবে। সৌরবিদ্যুৎ এসব চরের মানুষের জীবন বদলে দেবে, এটাই প্রত্যাশা।

কিন্তু এই রাজশাহীতে সৌরবিদ্যুতের অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। ২০১৪ সালে বাঘায় পদ্মার চরে অবস্থিত দাদপুর, পলাশী ও কালিদাসখালীতে প্রায় ৬০০ বাড়িতে দেওয়া হয়েছিল বিদ্যুৎ–সংযোগ। গ্রাহকেরা দেড় বছর থেকে বিদ্যুৎ না পেয়ে বিল দেওয়া বন্ধ করেন। বিশ্বব্যাংক ১ দশমিক ৫ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ সোলার মিনি গ্রিড নির্মাণে সোয়া ৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। প্রকল্পটি এখন পরিত্যক্ত।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় ৫৫ লাখ পরিবার বিদ্যুতের সুবিধায় এসেছে। ২০০৯ সালে দেশে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করত ৯৬ হাজার পরিবার। প্রায় এক দশকের অগ্রগতি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু এটাও সত্য যে চর বা দুর্গম এলাকায় এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ৩০ টাকা আর গড়ে বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৬ টাকা। তার মানে, সুবিধাবঞ্চিত মানুষ অগ্রসর মানুষের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি দামে বিদ্যুৎ পাচ্ছে।

আবার সোলার প্যানেলের দাম ও খরচ যেমন বেশি, তেমনি সক্ষমতা কম। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটা ভর্তুকি দেওয়া হয়, বেসরকারি কয়েকটি সংস্থা সোলার প্যানেল ক্রয়ে ঋণসুবিধা দেয়। তারপরও সৌরবিদ্যুৎ এখন পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সহনশীল ব্যবস্থা নয়।

চরে তার টেনে অথবা সাবমেরিন কেব্‌ল দিয়ে বিদ্যুৎ নেওয়া অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব, সেখানে সৌরবিদ্যুৎই ভরসা। কিন্তু অভিযোগ আছে, গুণগত মান বজায় না রেখে চীন ও ভারত থেকে কম দামে সোলার প্যানেল আমদানি করা হচ্ছে, যা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অসম প্রতিযোগিতায় ফেলছে। এ খাতে গড়ে ওঠা স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর দেশের চাহিদা মেটানোর পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। তাই এই শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া, গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে সর্বনিম্ন সুদ নির্ধারণ, স্থানীয় শিল্পের স্বার্থ রক্ষায় সোলার প্যানেল আমদানি নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা প্রণয়ন, আমদানি করা সৌর যন্ত্রাংশের মান নিশ্চিত করা, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে উৎসাহিত করতে কর এবং মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতিসহ উৎসাহব্যঞ্জক প্রণোদনা দেওয়া উচিত।

২০১৬ সালে নেওয়া হয় ক্রাশ প্রোগ্রাম ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ প্রকল্প। এর আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে বা মুজিব বর্ষে শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। সরকারি হিসাবে, এখন পর্যন্ত ৯৭ ভাগ এলাকায় বিদ্যুতের সুবিধা পৌঁছেছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, বাকি যে তিন ভাগ এলাকা, তা দেশের দুর্গম ও পশ্চাৎপদ জনপদ; যেখানে রয়েছে চরাঞ্চল, পাহাড় ও হাওর-বাঁওড়। বিষয়টি ‘তালগাছের আড়াই হাত’ প্রবাদের মতো, যার মাধ্যমে বোঝানো হয়, যেকোনো কাজের শেষ ভাগটা সবচেয়ে কঠিন। সেই কঠিন কাজ করতে পারলে সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে আর উপকৃত হবে দেশের সুবিধাবঞ্চিত ও বিদ্যুৎ-বঞ্চিত মানুষ।