প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবা এমন বেহাল কেন

সম্পাদকীয়

করোনাকালে নিয়মিত চিকিৎসাসেবায় বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে স্থানীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো। করোনার চিকিৎসার কারণে জেলা-উপজেলার সরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়। তখন অন্যান্য রোগের চিকিৎসার জন্য মানুষের ভরসাকেন্দ্র হয়ে ওঠে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কমিউনিটি ক্লিনিক এবং মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রগুলো। আবার এর বিপরীত চিত্রও আমরা দেখতে পাই। ঝিনাইদহ জেলায় নতুন চারটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র হলেও সেগুলোর কোনো সুফলই পাচ্ছেন না নারী ও শিশুরা। পূর্ণাঙ্গ জনবল নিয়োগ না হওয়ায় কেন্দ্রগুলোতে শুধু বহির্বিভাগ চলছে, তা–ও বাইরে থেকে ধারে চিকিৎসক এনে যেনতেনভাবে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, তিন বছর আগে চারটি কেন্দ্রের মধ্যে শৈলকুপা উপজেলার কাঁচের কোল গ্রামে ও ঝিনাইদহ সদরে দক্ষিণ কাস্টসাগরায় দুটির উদ্বোধন হয়েছিল। আরেকটি শৈলকুপা উপজেলার দুধস্বর গ্রামে নির্মাণকাজ শেষ হলেও উদ্বোধন হয়নি। এগুলো সবই ১০ শয্যাবিশিষ্ট। যার প্রতিটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা করে। কেন্দ্রগুলোর ছাই রঙের ঝকঝকে তিনতলা ভবনের চারপাশ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। সামনে বিশাল আকৃতির ফটক, ভেতরে খোলামেলা অনেকটা জায়গা। অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি, উন্নতমানের শয্যা, চেয়ার, টেবিল, চিকিৎসকের ব্যবহারের মালামাল সবই পড়ে আছে।

মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য এমন উদ্যোগ কোনো কাজে আসবে না, সরকারি সম্পদ নষ্ট হবে—বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ঝিনাইদহের এ কেন্দ্রগুলোর সেবা থেকে স্থানীয় নারী ও শিশুরা বঞ্চিত করা হচ্ছে। ঝিনাইদহ স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাহিদ আহম্মেদ বলেন, এ প্রতিষ্ঠানগুলো জনবলের অভাবে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে উদ্বোধনের পর থেকেই তিনি অন্যত্র থেকে লোক এনে বহির্বিভাগগুলো চালু রেখেছেন। তিনি জানান, সরকারিভাবে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে, তা সম্পন্ন হলে এগুলো চালু করা সম্ভব হবে।

প্রসূতি ও শিশুর সেবায় গত বছর কয়েকটি জেলায় দারুণ সাফল্য আমরা দেখতে পাই। যেমন গাইবান্ধা শহরে একটি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে করোনাকালেই তিন সহস্রাধিক স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটেছে। গত সাত বছরে কেন্দ্রটিতে সেই সংখ্যা ২০ হাজার। একইভাবে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকটি কেন্দ্রও। আমরা চাই ঝিনাইদহের কেন্দ্রগুলোকে দ্রুত সচল করা হোক, পূর্ণাঙ্গ জনবল নিয়োগ করা হোক। জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা আস্থা রাখতে চাই।