প্রাণিচিকিৎসক নেই কেন

সম্পাদকীয়

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে একটি ওয়াইল্ডলাইফ রেসকিউ সেন্টার বা বন্য প্রাণী উদ্ধারকেন্দ্র আছে। লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করার পর বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট শাখার আওতায় জানকীছড়া ক্যাম্পের ভেতরে রেসকিউ সেন্টারটি স্থাপন করা হয়। উদ্দেশ্য অসুস্থ বন্য প্রাণীদের উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সেবাশুশ্রূষার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলার পর আবার বনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া। এ উদ্দেশ্যের পেছনে প্রাণ–প্রকৃতির প্রতি সংবেদনশীলতা আছে বলে মনে হয়। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল ও অন্যান্য লজিস্টিক সমর্থনের ব্যবস্থা করা না হলে উদ্ধারকেন্দ্রটি স্থাপনের কোনো অর্থ থাকে না।

যে সেন্টারের মুখ্য কাজ অসুস্থ বন্য প্রাণীদের চিকিৎসা করা, সেখানে কোনো প্রাণিচিকিৎসকই নেই। সেন্টারটিতে প্রাণিচিকিৎসকের পদ রয়েছে মাত্র একটি, কিন্তু সেই একমাত্র পদটিই শূন্য রয়েছে। সেখানে অসুস্থ বন্য প্রাণীদের চিকিৎসার কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী শ্রীমঙ্গল প্রাণিসম্পদ চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রাণিচিকিৎসকদের সহায়তায়। এ অবস্থা চলছে দীর্ঘ চার বছর ধরে। শুধু যে প্রাণিচিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে তা নয়, সেন্টারটিতে অন্যান্য লোকবলেরও ঘাটতি আছে। এ মুহূর্তে রেসকিউ সেন্টারজুড়ে কর্মরত আছেন মাত্র দুজন। একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট আর একজন বনপ্রহরী।

দুটি মাত্র লোক দিয়ে একটি বন্য প্রাণী উদ্ধারকেন্দ্র যে ভালোভাবে চলতে পারে না, তা সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানেই বোধগম্য। আমাদের কমলগঞ্জ প্রতিনিধি সরেজমিনে দেখতে পেয়েছেন, রেসকিউ সেন্টারটির ভবনগুলোর চারদিকে বেড়ে উঠেছে ঝোপ–জঙ্গল, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। পুরো সেন্টারটি যেন এক পরিত্যক্ত স্থাপনা। তবে তা সত্ত্বেও সেখানে এ মুহূর্তে চিকিৎসাধীন আছে দুটি মেছো বাঘ, পাঁচটি বানর ও তিনটি অজগর সাপ। কিন্তু সেগুলো ঠিকমতো চিকিৎসা ও সেবাশুশ্রূষা পাচ্ছে কি না, তা নিয়ে নিশ্চয়ই প্রশ্ন তোলা যায়। কারণ, সেখানে কোনো প্রাণিচিকিৎসক নেই।

বন্য প্রাণীর রেসকিউ সেন্টারটিতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক লোকবলের পদ সৃষ্টি করে লোক নিয়োগ করা হয়নি। আর যে গুটিকয় পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, তার সব কটিতে লোক নিয়োগ করা হয়নি—এ থেকে প্রশ্ন জাগে, সেন্টারটি কি শুধুই কাগুজে নিয়ম রক্ষার তাগিদে স্থাপন করা হয়েছে? বিশেষত, প্রাণিচিকিৎসকের একমাত্র পদটি দীর্ঘ চার বছর ধরে শূন্য থাকার বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অবিলম্বে সেখানে একজন প্রাণিচিকিৎসক নিয়োগ করা হোক। অন্যান্য লোকবলের ঘাটতি পূরণেরও উদ্যোগ নেওয়া হোক।