ফরিদপুরে দুই ভাই–কাণ্ড

সম্পাদকীয়

রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ফরিদপুর আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা যে বিত্তবৈভবের পাহাড় গড়েছেন, সে কথা আট মাস আগেই দেশবাসী জেনেছে আলোচিত দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলার সূত্রে। তাঁরা হলেন ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকত এবং ফরিদপুর প্রেসক্লাবের বহিষ্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেল। তবে ফরিদপুরে চাঁদাবাজি, দখলবাজি তথা দুর্বৃত্তায়নের কাজে আরও অনেকের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বুধবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১০ জনকে আসামি করে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে দুই ভাইয়ের সঙ্গে সাবেক মন্ত্রী ও ফরিদপুর-৩ আসনের সাংসদ খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন ওরফে বাবর, খন্দকার মোশাররফের সাবেক এপিএস এ এইচ এম ফোয়াদও আছেন। মামলার আসামিদের মধ্যে দুই ভাই রুবেল-বরকত, খন্দকার নাজমুল ইসলাম ও আসিবুর রহমান বর্তমানে কারাগারে। বাকি ছয়জন পলাতক। আসামিরা অবৈধ উপায়ে যে অর্থ ও সম্পদ অর্জন করেছেন, তার একাংশ সরকার জব্দ করলেও বেশির ভাগ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সাবেক মন্ত্রীর ভাই বাবর ও এপিএস ফোয়াদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ও অন্যদের সহযোগিতায় বরকত ও রুবেল এ বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন।

এ মামলার বাদী সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ বলেন, সহযোগী হিসেবে বাকি ৪১ জনের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তাঁদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট জমা দেওয়া হবে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বরকত ও রুবেলের ৫ হাজার ৭০৬ বিঘা জমি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের ১৮৮টি ব্যাংক হিসাবে থাকা প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাঁদের মালিকানাধীন গাড়িসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ৬৭টি, জমি ৫ হাজার ৩৮৮ বিঘা ও পৌনে ১০ কোটি টাকা ক্রোক করা হয়েছে।

ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই ক্ষমতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে কেবল অবৈধ উপায়ে সম্পদ গড়েননি; হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও লুটপাটের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। বহু মানুষের ওপর তাঁরা নির্যাতন চালিয়েছেন। আত্মতরক্কির জন্য এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তাঁরা করেননি। ক্ষমতাকে ব্যবহার করে এ ধরনের ঘটনা কেবল ফরিদপুরে ঘটেনি; দেশের অন্যান্য স্থানেও কমবেশি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ২০১৯ সালে ঢাকায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণির নেতা-কর্মীর চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে। কিন্তু এরপরই অজ্ঞাত কারণে অভিযান থেমে যায়।

ফরিদপুরের ঘটনায় সিআইডি কেবল অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। কিন্তু তার আগে সব আসামিকে গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় তাঁদের দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার যেমন আশঙ্কা আছে, তেমনি দেশের ভেতরে থেকে তাঁরা মামলাও প্রভাবিত করতে পারেন।

সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বলে থাকেন, আইন নিজস্ব গতিতে চলবে। ফরিদপুরে দুই ভাই ও অন্যদের বিরুদ্ধে আনা মামলার মাধ্যমেই তার একটি পরীক্ষা হয়ে যেতে পারে। আমরা আশা করব, দ্রুততম সময়ে বিচারিক কাজ শেষ করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। সেই সঙ্গে ফেরত আনা হবে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ।