বই পড়ার এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ুক

সম্পাদকীয়

তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত বিকাশমান এই যুগে বই পড়ার প্রবণতা আমাদের সমাজে কমে আসছে। কিশোর ও তরুণেরা ডিজিটাল মাধ্যমে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষা ও পাসনির্ভর হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইয়ের বাইরে তেমন কোনো বই পড়ছেন না। বাংলা ও বিশ্বসাহিত্যের ধ্রুপদি বই, জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শনের অন্যান্য বই না পড়ায় শিক্ষার্থীদের মননশীলতার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে স্রোতের বিপরীতে যশোরে ‘সপ্তাহে একটি বই পড়ি’ নামে পাঠচক্রবিষয়ক একটি সংগঠন ভিন্ন একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ‘সপ্তাহে একটি বই পড়ি’ সংগঠনটির মূল সংগঠক মাইকেল মধুসূদন কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহজাহান কবীর। সংগঠনের নিয়মিত বই পড়া সদস্য আছেন ২০ জনের মতো। প্রতি মাসের চার সপ্তাহে চার ধরনের ৮০টি বই কিনে সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, পড়া শেষ হলে সেগুলো আবার ফেরত নেওয়া হয়।

সদস্যদের প্রতি আসরে চা-নাশতাও দেওয়া হয়। সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে কোনো চাঁদা নেওয়া হয় না। চাকরির বেতনের টাকা বাঁচিয়েই বই কেনা ও নাশতার খরচ জোগান শাহজাহান কবীর।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠ অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সংগঠনটির নামে একটি পেজ খোলা হয়েছে। প্রতি আসরের ছবি ও সাহিত্য আলোচনা সেখানে পোস্ট করা হয়। আবার বইয়ে বর্ণিত আবহের জন্য উপযুক্ত পরিবেশও খুঁজে বের করা হয়। যেমন উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ারের ট্র্যাজেডি নাটক হ্যামলেট পড়ার জন্য যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চ বেছে নেওয়া হয়।

মোমের আলোর মাঝখানে গাঁদা ফুলের টব ও রজনীগন্ধার ডালার চারপাশে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক গোল হয়ে বসে হ্যামলেট পাঠ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতা আলোচনার দিনে পাঠচক্রের সদস্যরা চলে যান রবি ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি যশোর-খুলনার সীমান্তে ফুলতলার দক্ষিণডিহিতে। এ ছাড়া সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের শহীদ আসাদ গেটের সামনে ‘নির্বাচিত’ নামে একটি বইয়ের দোকানে প্রতি শুক্রবার পাঠচক্রটি বসে। প্রতিটি বইয়ের ক্ষেত্রে একজন করে মুখ্য আলোচক থাকেন। সদস্যরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে আলোচনায় অংশ নেন।

পাঠচক্রটি গড়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়ে শাহজাহান কবীর বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার একটি সুস্থ-সুন্দর পাঠকসমাজ গড়ে তোলা।’ একটা সুস্থ, মানবিক ও মননশীল সমাজ গঠনের জন্য বই পড়ার অভ্যাস অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শাহজাহান কবীরের বই পড়ার এ আন্দোলন আমাদের সমাজে ছড়িয়ে পড়ুক।