বঞ্চিত করোনাযোদ্ধারা

যেসব চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা করেছেন, সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও তাঁরা এখন পর্যন্ত প্রণোদনা ভাতা পাননি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের মধ্যে চিঠি চালাচালি করতেই ছয় মাস চলে গেল। কবে তাঁরা প্রণোদনা পাবেন, সে বিষয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।

উল্লেখ্য, সরকার গত ১ জুলাই করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভিডিও কনফারেন্সে বলেছিলেন, ‘মার্চ মাস থেকে যাঁরা কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করছেন, সরকার তাঁদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য বিশেষ প্রণোদনা দেবে। এ ছাড়া দায়িত্ব পালনের সময় কেউ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে তাঁদের জন্য ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার একটি স্বাস্থ্যবিমা থাকবে। কেউ মারা গেলে স্বাস্থ্যবিমার পরিমাণ পাঁচ গুণ বেশি হবে।’

এ বিষয়ে সম্প্রতি বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে কর্মরত প্রত্যেক চিকিৎসক দৈনিক ২ হাজার টাকা করে মাসে ১৫ দিন, নার্স ১ হাজার ২০০ টাকা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীকে ৮০০ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়। ঢাকার বাইরে চিকিৎসকেরা যথাক্রমে ১ হাজার ৮০০ টাকা, নার্স ১ হাজার টাকা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ৬৫০ টাকা পাবেন। তবে যেসব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী সরকারের কাছ থেকে আবাসন সুবিধা নিয়েছেন, তাঁরা এই প্রণোদনা পাবেন না। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী যেসব চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনা রোগীদের ১৫ দিন চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন, পরবর্তী ১৫ দিন তাঁদের কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভূতাপেক্ষ প্রণোদনা সুবিধা পাবেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকের সংখ্যা ৫ হাজার ৭২৬, নার্স ১০ হাজার ৪৪ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ৮ হাজার ৫১৫। তাঁদের সবাইকে ভাতা দিতে সরকারের মাসে খরচ হবে ৩৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তবে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি চিকিৎসাসেবীদের মধ্যে কতজন এই প্রণোদনা পাবেন।

করোনার প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার জন্য চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সরকারি খরচে হোটেলে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হোটেলভাড়া ও খাবারের অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে বেশ হইচই হয়েছিল। পরবর্তীকালে সরকার তাঁদের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা বাতিল করে।

করোনা রোগীদের সেবা দেওয়া চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনাযুদ্ধের সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। করোনায় আক্রান্ত ও মৃত স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের পরিবারকেও উপযুক্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সেই সহায়তা পেয়েছেনও। বাংলাদেশে মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮৭৬ জন, নার্স ১ হাজার ৯৭৩ আর অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২৭৬ জন। করোনায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১১০জন চিকিৎসক।

কিন্তু সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী করোনা চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা কেন প্রণোদনা পাবেন না? চিকিৎসকেরা বলেছেন, তাঁরা সরকারের কাছে প্রণোদনা চাননি। সরকার স্বেচ্ছায় এটি ঘোষণা করেছে। এখন এ নিয়ে অযথা বিলম্ব কিংবা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তাঁদের জন্য অসম্মানজনক।

অবিলম্বে করোনার চিকিৎসারত চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রণোদনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হোক।