বঞ্চিত যশোরের সবজিচাষিরা

সম্পাদকীয়

ধান হোক আর সবজি হোক—প্রত্যেক কৃষকই চাইবেন খরচ উঠিয়ে নিতে। কেবল খরচ উঠলেও হবে না, সংসার চালানোর মতো তাঁকে কিছু লাভও করতে হবে। অন্যথায় তিনি নতুন করে চাষও করতে পারবেন না। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে উৎপাদিত পণ্যে কৃষকের আবাদের খরচ উঠে আসছে না। শুক্রবার প্রথম আলোর প্রতিবেদনে যশোরের সবজিচাষিদের দুরবস্থার চিত্র উঠে এলেও সারা দেশের অবস্থাও ভিন্ন নয়।

যশোর থেকে মনিরুল আলমের পাঠানো খবরে বলা হয়, চলতি বছর যশোরে প্রচুর সবজি উৎপন্ন হলেও কৃষক দাম পাচ্ছেন না। যশোর সদর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন ৪০ কেজি শিম বিক্রি করেছেন ২ টাকা কেজি দরে। ছোট হৈবতপুর গ্রামের ইজাজুল ইসলাম ৩ বিঘা জমিতে শিম আর ১৩ কাঠায় বেগুন চাষ করেছিলেন। ৯০ কেজির দুই বস্তা শিম নিয়ে হাটে গেলে প্রতি কেজির দাম ওঠে আড়াই টাকা। তিনি শিম বিক্রি না করেই বাড়ি ফিরে গেছেন। বারীনগর সবজি মোকামে দেখা গেছে, প্রতি কেজি শিম ২ থেকে ৩ টাকা, বেগুন ৩ থেকে ৪ টাকা, ফুলকপি ২ টাকা, বাঁধাকপি ২ থেকে ৩ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৮ থেকে ১০ টাকা, নতুন পেঁয়াজ ২৫ টাকা ও পেঁয়াজের কলি ২ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে।

কেবল এই দুই কৃষকই নন, এলাকার অধিকাংশ কৃষক সবজি চাষ করে বিপদে পড়েছেন। অনেক খেতের সবজি বাজারে নিয়ে মাঠেই ফেলে দিয়ে বোরো চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যে বেগুন বা শিম ঢাকায় প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়, সেই বেগুন কেন যশোরে আড়াই টাকায় বিক্রি হবে? যশোর থেকে ঢাকায় এসব পণ্য আনতে কেজিতে কত খরচ হয়? একশ্রেণির ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগী নানা কারসাজি করে কৃষকদের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কৃষিপণ্য কেনা ও আধুনিক বিপণনব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।

কৃষক যাতে সবজি চাষ করে লোকসানের মুখে না পড়েন, সে জন্য উন্নত ও আধুনিক বিপণনব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সে ক্ষেত্রে ফড়িয়াদের কাছে কৃষককে জিম্মি হতে হবে না। প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করতে হবে উন্নত মানের হিমাগার, যাতে কৃষকেরা সবজি সংরক্ষণ করতে পারেন। এ অবস্থায় কৃষক যেমন লাভবান হবেন, তেমনি ভোক্তারা সারা বছর ন্যায্য দামে সবজি পাবেন।