বন্য হাতি হত্যা

সম্পাদকীয়

বৈদ্যুতিক শক দিয়ে এবং গুলি করে একটি বন্য হাতিকে হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কক্সবাজারের রামুতে আরও একটি বন্য হাতিকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হাতিটিকে অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি। বিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় থাকা এশীয় হাতির এভাবে একের পর এক ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ মোটেও কাম্য নয়।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ থেকে এশীয় হাতি বিলুপ্ত হতে বেশি সময় লাগবে না। বন বিভাগের হিসাবে, গত এক বছরে হাতি মারা গেছে ১৮টি, এর মধ্যে কক্সবাজার অঞ্চলে অন্তত ১৩টি বন্য হাতি হত্যা করার মতো বর্বর ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বান্দরবানের লামা এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামে কয়েকটি হাতি মারা গেছে। তার মানে আইনকানুন ও বিলুপ্তির আশঙ্কা থাকার পরও হাতি নিধন চলছেই।

গত রোববার রামুতে একটি হাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে ৬ নভেম্বর চকরিয়ায় তিন বছর বয়সী একটি বন্য হাতিকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বন্য হাতি লোকালয়ের কাছাকাছি এসে ধানখেতসহ বিভিন্ন ফসল খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে। এ জন্য বৈদ্যুতিক শক দিয়ে ও গুলি করে হাতি হত্যার মতো নিষ্ঠুর ঘটনাগুলো ঘটছে।

এ কথা প্রায় সবারই জানা যে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ঢল নামার পর কক্সবাজারসহ সীমান্তের পাহাড়ি বনাঞ্চলে চলাচল করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ছে বন্য হাতিরা। রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী শিবির নির্মাণ করতে অসংখ্য বন ও গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। হাতিদের বাসস্থান ও খাদ্য ক্রমে সংকুচিত হয়েছে। বন্য হাতিদের আক্রমণে অন্তত ১৫ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়, আইইউসিএন এবং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা যৌথভাবে একটি কর্মসূচি পরিচালনা করছে, যার লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হাতিদের রক্ষা করা।

আইইউসিএনের চলমান হাতি জরিপের প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী দেশে বড়জোর ২০০টি হাতি রয়েছে। অথচ ২০০৪ সালে আইইউসিএনের জরিপ অনুযায়ী দেশে হাতি ছিল ২৭৯ থেকে ৩২৭টি। এর মধ্যে ১৯৬ থেকে ২২৭টি হাতি বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বাস করে। বাকিগুলো বিচরণ করে ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারজুড়ে। যদিও ভারতীয় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ায় হাতির বিচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

হাতির কাছে রাষ্ট্রের সীমানা মূল্যহীন। এরা খাবার, পরিবেশ ও স্বাধীনভাবে দলবদ্ধভাবে চলাফেরার সুযোগ চায়। এসব সুযোগ না পেলে বিরক্ত হয়, লোকালয়ে চলে যায়, ফসল নষ্ট করে ও মানুষের ওপর আক্রমণ চালায়। চলাফেরায় হাতি বেশ স্বাধীন হলেও ওদের সুরক্ষা দিতে আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। সেই আইন কার্যকর হোক, এর পাশাপাশি দরকার মানুষের সচেতনতা। হাতির চলার পথ ও তাদের বসতি ও বিচরণক্ষেত্র রক্ষা করার কোনো বিকল্প নেই।