বরেন্দ্রে সফল স্পিরুলিনা চাষ

সম্পাদকীয়

অনাবাদি সব জমিই একসময় চাষের আওতায় চলে আসবে। কিন্তু জনসংখ্যার বৃদ্ধি তো আর থামবে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমবে কৃষিজমি। তাই খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর নতুন নতুন ক্ষেত্র সন্ধান করতে হবে। খাবারের ভালো একটা ভবিষ্যৎ উৎস হবে জলজ উদ্ভিদ। উচ্চমাত্রায় প্রোটিন থাকায় এটি হতে পারে মাংসের চমৎকার বিকল্প। এই উদ্ভিজ্জ খাবারে আছে ভালো অ্যামিনো অ্যাসিড। আছে ওমেগা-৩, ভিটামিন বি১২। তাই জলজ উদ্ভিদকে বলা হচ্ছে ভবিষ্যতের সুপারফুড। সবচেয়ে বড় কথা, প্রোটিনের অন্য উৎসগুলোর মতো জলজ উদ্ভিজ্জের জন্য বেশি জায়গা লাগে না। সাগর, পুকুর, খাল, বিল—পানি আছে এমন যেকোনো জায়গায়ই এটি চাষ করা যায়। এমনকি ছাদেও কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করে এই উদ্ভিদ উৎপাদন করা সম্ভব।

এই জলজ উদ্ভিদেরই একটি জাত স্পিরুলিনা। নীল-সবুজ এই শেওলা অনেক দিন ধরেই মানুষের খাদ্যতালিকায় আছে। কয়েক শ বছর আগে থেকেই দক্ষিণ আমেরিকার মানুষ পুকুরে স্পিরুলিনার চাষ করে নানা ধরনের খাবারে মিশিয়ে খেত। আর এখন তো স্পিরুলিনা ট্যাবলেট ও পাউডার আকারেও বাজারে পাওয়া যায়। এই স্পিরুলিনার আরেকটা বড় ভোক্তা হচ্ছে রঙিন মাছ। রঙিন মাছের খাবার এই শৈবাল। বর্তমানে দেশে রঙিন মাছের একটা বড় বাজার আছে। স্বাভাবিকভাবেই তাই স্পিরুলিনারও চাহিদা আছে। উচ্চমূল্যে থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করে মেটানো হয় এই চাহিদা। অথচ চাইলে দেশেই কিন্তু উৎপাদন করা যায় এই শেওলা। দরকার শুধু চাষের বিদ্যাটা জানা।

থাইল্যান্ড থেকে সেই বিদ্যাই শিখে এসেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জালাল উদ্দিন। তাঁর কাছ থেকে শিখেছেন ঝিনাইদহের দেলোয়ার হোসেন। আর তাঁর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সারা দেশের প্রায় দেড় শ উদ্যোগী। তাঁদেরই একজন রাজশাহীর তানোরের কলেজশিক্ষক রাকিবুল সরকার। প্রশিক্ষণ নিয়ে অলস বসে থাকেননি রাকিব, বাণিজ্যিকভাবে স্পিরুলিনা চাষের জন্য আমশো গ্রামে গড়ে তুলেছেন ১৭ হাজার লিটার পানির কৃত্রিম জলাধার। ৪ মার্চ সেই জলাধার থেকে প্রথমবারের মতো শৈবাল আহরণ করেছেন রাকিব। তাঁর আশা, প্রতি মাসে এখান থেকে তিনি ৩০ থেকে ৪০ কেজি শুকনা স্পিরুলিনা উৎপাদন করবেন। প্রতি কেজি স্পিরুলিনার বর্তমান বাজারমূল্য ছয় হাজার টাকা। তাঁর এ উদ্যোগ সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ুক। তাহলে পুষ্টিহীনতার এ দেশে তৈরি হবে পুষ্টির নতুন একটি উৎস, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান, বাঁচবে বৈদেশিক মুদ্রা।