বাঁধ রক্ষায় মাঠে কর্মকর্তারা

প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি অনুযায়ী, মৌসুমি বর্ষণের অবিশ্রাম ধারা শুরু হতে দেরি আছে। এখনো খাল-বিল, নদী-নালা অপেক্ষাকৃত শুকনো। কোথাও বন্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবু আশ্বস্ত হতে পারে না হাওর অঞ্চলের বাসিন্দারা। কারণ, ২০১৭ সালের মার্চের শেষ সপ্তাহেও এখনকার মতো অবস্থা ছিল। কিন্তু মে মাসের শুরুতেই আচমকা নেমে এসেছিল পাহাড়ি ঢল, সঙ্গে টানা বৃষ্টি। ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম থাকায় বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। গোটা হাওর অঞ্চলে পানি ঢুকে পোয়াতি আর প্রসূতি বোরো ধান ডুবে গিয়েছিল। খাবারের অভাবে দিশেহারা হয়েছিল মানুষ ও গবাদিপশু। ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা ছুঁয়েছিল। ৯০ লাখ মানুষ খাদ্যঝুঁকিতে ছিল।

এখন হাওর ভরা বোরো ফসল। ঘর পোড়া গরুর মতো তাই হাওরবাসী সেই ধরনের বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তির ভয়ে আছে। আশার কথা, হাওরবাসীর উদ্বেগকে প্রশাসন আন্তরিকভাবে নিয়েছে। বিশেষ করে সুনামগঞ্জের প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছেন। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, হাওরের বোরো ফসল কৃষকের গোলায় না ওঠা পর্যন্ত তাঁরা মাঠে থাকবেন। ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে যুক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির লোকজনকেও থাকতে হবে। ফসল ওঠার পরই তাঁরা কাজের চূড়ান্ত বিল পাবেন, তার আগে নয়।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক সভায় জানানো হয়, এই জেলায় এবার ৪২টি হাওরে ৫৭২টি প্রকল্পের মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ হচ্ছে। জেলায় বাঁধের কাজ গড়ে ৯৭ ভাগ শেষ হয়েছে। বাঁধের কাজের এই অগ্রগতিকে হাওর এলাকার অন্য জেলাগুলোর কর্তৃপক্ষের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত বলা যেতে পারে। বন্যার শঙ্কা রোধ এবং বন্যার্তদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন—উভয় ক্ষেত্রেই চিরকালীন অকর্মণ্যতা দেখে দেশবাসী যখন হতাশ, তখন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পাউবোর এই তৎপরতা দেশবাসীর মনে আশা জাগাবে।

নদী সংস্কার, বন্যা রোধ বা বন্যাত্রাণের মতো কাজ কেবল দপ্তরে বসে করার বিষয় নয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিবিড় পদক্ষেপ জরুরি। শুধু বসে বসে ফাইল স্বাক্ষর করার পুরোনো কার্যপদ্ধতি এ ধরনের কাজকে চলিষ্ণু করার আদর্শ পন্থা নয়। কর্মকর্তারা দপ্তরে বসে থাকলে কর্মীরাও বসে থাকেন। বিষয়টি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন উপলব্ধি করতে পেরেছে বলেই মনে হয়।

আরেকটি বিষয় হলো, বন্যাত্রাণের চেয়েও বন্যা রোধে স্থায়ী পরিকল্পনা রূপায়ণ বেশি জরুরি। এটি না করতে পারলে বছরের পর বছর বন্যার একই গল্প পুনরাবৃত্ত হতে থাকবে। বন্যাত্রাণ ও পুনর্বাসনে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, বন্যা রোধ প্রকল্প তার চেয়ে স্বল্প ব্যয়েই সেরে ফেলা যায়। তাই ফসল রক্ষা বাঁধকে অধিক মজবুত ও টেকসই করতে কী কী করা যায়, সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।