বাঁধের নিচ থেকে বালু তোলা

opinion

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন–২০১০ বলছে, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য সরকারি–বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু তোলা যাবে না। তীরে ভাঙনের আশঙ্কা থাকলে কোনো নদী থেকেও বালু তোলা যাবে না।

বাংলাদেশে আইনে অনেক কিছুই থাকে, কিন্তু আইনকে কেউ যেন পরোয়া করতে চায় না। শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বালু ব্যবসায়ীরা তা–ই করছেন এবং তাঁদের বাধা দেওয়ার কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না। কোনো নিয়মনীতি ও আইনের তোয়াক্কা না করে বালু তোলার কারণে ভোগাই নদের বাঁধ ভাঙনের মুখে পড়ছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভোগাই নদের চারটি এলাকা থেকে বালু তোলার ইজারা নিয়েছিল মেসার্স ইলিয়াস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে পর্যাপ্ত বালু না পাওয়ায় তারা বালু তোলা শুরু করেছে মণ্ডলিয়াপাড়া এলাকায় নদ রক্ষা বাঁধের নিচ থেকে। এ জন্য তারা বাঁধের কিছু গাছও কেটে ফেলেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বালু ব্যবসায়ীদের বাধা দিয়েও নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

বাঁধের নিচ থেকে বালু তোলায় বাঁধটি নিশ্চিতভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্ষা মৌসুমে পানির চাপ বেড়ে গেলে বাঁধ টিকিয়ে রাখা কঠিন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্লাবিত হবে আশপাশের গ্রাম।

যেখানে বালু তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, সেখানে পর্যাপ্ত বালু না পেয়ে বাঁধের নিচ থেকে বালু তোলা আইনের লঙ্ঘন। বালু ব্যবসায়ীরা এ অবৈধ কাজ করে যাচ্ছেন প্রায় ১৫ দিন ধরে এবং এ জন্য তার শ্যালো মেশিন বসিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে আইন অমান্য করে বালু তোলা হচ্ছে, তা ঠেকানোর দায়িত্ব কার?

এ অনিয়ম প্রশ্নে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছ থেকে যে মন্তব্য পাওয়া গেল, তা বিস্ময়কর। বালু তুলে যেখানে বাঁধের বারোটা বাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তখন ইউএনও মাহফুজুল আলম বলেছেন, ওই স্থানে বালু তোলার বিষয়ে ‘খোঁজখবর’ নেওয়ার জন্য তিনি ইউপি চেয়ারম্যানকে ‘বলবেন’। এবং ‘দরকার’ হলে অভিযান চালানো হবে। অথচ স্থানীয় রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁরা দিনে বাধা দিলে বালু ব্যবসায়ীরা রাতে বালু তোলেন। তাই তিনি মনে করেন, বালু তোলা বন্ধে প্রশাসনের অভিযান দরকার।

আইন ভেঙে বালু তোলার জন্য বালু ব্যবসায়ীরা যেমন দায়ী, তেমনি বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারার দায়টিও উপজেলা প্রশাসনের এবং সেই প্রশাসনের নির্বাহী হিসেবে ইউএনওর। কারণ, উপজেলা প্রশাসন থেকে বালু তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেটা আইন মেনে করা হচ্ছে কি না, সেটা দেখতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।

অবিলম্বে বালু তোলা বন্ধ, বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং উপজেলা প্রশাসন ও নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বহীন আচরণের ব্যাপারে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।