বাঁশের সাঁকো আর কত কাল

নদী নেই, নালা নেই, মাঠের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে পাকা সেতু। এমন দৃশ্য এই বাংলাদেশে আমরা অনেক দেখেছি। অথচ যেখানে সেতু অত্যন্ত প্রয়োজন, সেখানে তা নেই, এমন চিত্রও এই বাংলাদেশেই আছে। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালা ইউনিয়নে একটি সেতুর অভাবে পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগের খবর সম্প্রতি ছাপা হয়েছে প্রথম আলোয়।

বাবুপুর নামের একটি গ্রামে একটি পাকা সেতু ছিল। আশপাশের পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দারা সেতু ব্যবহার করত। প্রায় তিন বছর আগে বন্যায় সেতুটিতে ওঠার ও নামার সড়কটি দুই পাশেই ভেঙে গেছে, সেতুর মূল কাঠামোটিও দেবে গিয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ২৬ ফুট দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল সাত–আট বছর আগে, ২০১২–১৩ অর্থবছরের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ কর্মসূচির আওতায়। এত অল্প সময়েই সেটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ার কারণ হিসেবে ওই এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, সেতুটির নির্মাণ পরিকল্পনায় সম্ভবত কোনো ত্রুটি ছিল। সে কারণে ছোটখাটো বন্যাতেই সেতুটিতে ওঠা ও নামার সংযোগ সড়কটি ভেঙে গিয়ে মাঝখানে খাদের সৃষ্টি হয়। ২০১৭ সালের বন্যার পর থেকে সেতুটি আর ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

কিন্তু দীর্ঘ তিন বছরেও সেতুটি মেরামত করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এলাকার বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে নিজেদের উদ্যোগে সেতুটির পাশেই দু–তিনটি বাঁশ দিয়ে একটি সাঁকো তৈরি করেছেন। সেটির ওপর দিয়ে একসঙ্গে একাধিক মানুষ চলাচল করতে পারে না। চলাচল বলতে শুধু পায়ে হাঁটা; ওই সরু সাঁকোর ওপর দিয়ে রিকশা–ভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন দূরে থাক, বাইসাইকেল নিয়েও চলাচল করা যায় না।

কিন্তু ওই পাঁচ গ্রামের বাসিন্দাদের তো শুধু হেঁটে নিজ নিজ শরীর বহন করে বেড়ালেই চলে না। আর সবার মতো তাঁদেরও জীবিকা আছে, ব্যবসা–বাণিজ্য আছে এবং এসব প্রয়োজনে কাজকর্মের সরঞ্জাম ও কৃষিপণ্যসহ নানা ধরনের মালামাল পরিবহন করতে হয়। আশপাশের গ্রামগুলোতে ধান, শর্ষে, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়। সেগুলো হাটবাজারে নিয়ে যেতে হয়। মোদ্দা কথা, পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটি সেতুর ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, তা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন পড়ে না।

সুতরাং আর দেরি না করে সেতুটি মেরামত কিংবা সম্পূর্ণ নতুনভাবে নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। ওই এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘ সময় ধরে এ দাবি জানিয়ে আসছেন। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।