বাউফলে দোয়ানির খাল

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ইন্দ্রুকুল এলাকায় দেড় মাস ধরে একটি লোহার সেতু ভেঙে পড়ে থাকলেও তা নির্মাণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর উদ্যোগ না থাকার বিষয়টি বিস্ময়কর। প্রায় ২০ বছর আগে দোয়ানির খালের ওই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। সবার চোখের সামনে সেটির বয়স বেড়েছে, এটা জরাজীর্ণ হয়েছে এবং একপর্যায়ে সেটি ভেঙেও পড়েছে। কিন্তু এত দিনেও শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের কথা ভেবে কেউ এটি সংস্কার করেনি।

সেতু পার হয়ে ইন্দ্রুকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আকবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসা, মধ্য ইন্দ্রুকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক শ শিক্ষার্থী যাতায়াত করে, স্থানীয় কয়েক হাজার মানুষও এটি ব্যবহার করেন। সেতুটির কাছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে, যেটি পার হয়ে রোগীরা আসা-যাওয়া করেন। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে ধানের বীজবোঝাই একটি টমটম যাওয়ার সময় সেতুটি ভেঙে পড়ে। তারপর থেকে শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ ও রোগীরা এ ভাঙা সেতু দিয়েই যাতায়াত করছেন, পোহাচ্ছেন অবর্ণনীয় দুর্ভোগ।

প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধি ওই এলাকায় গিয়ে দেখেছেন, অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে সেতুটির ওপর দিয়ে চলাচল করছেন। বিশেষ করে বয়স্ক, রোগী ও শিশুদের ঝুঁকিটা তুলনামূলক বেশি। ইন্দ্রুকুল গ্রামের আসমা বেগম তাঁর পাঁচ বছরের অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে কলাগাছের ভেলায় দোয়ানির খাল পার হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। এ চিত্র নিত্যদিনের। কেউ ভাঙা সেতু দিয়েই খাল পার হচ্ছেন, কেউ পার হচ্ছেন কলাগাছের ভেলায় চড়ে।

সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখাই জনপ্রতিনিধিদের কাজ। সেখানে সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় সরকারের নানা স্তরের জনপ্রতিনিধি আছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সরকারি নানা দপ্তর আছে সেখানে। হয় তাঁদের কারও নজরে বিষয়টি পড়েনি, না হয় তাঁরা দেখেও দেখেননি।

আশার কথা হচ্ছে গণমাধ্যমে এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর লোহার সেতুটি মেরামত করার চিন্তা শুরু করেছে। এটি ঠিক করতে ২ লাখ ৭৯ হাজার টাকার খরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ নিয়ে আগামী সপ্তাহে একটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এরপর জেলায় ৯টি সেতু নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে। সেগুলোর মধ্যে ইন্দ্রুকুলের সেতুটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

দোয়ানির খালের ওপর সেতুটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা হোক, অথবা নতুনভাবে সেতুটি তৈরি করা হোক। এর পাশাপাশি যেসব জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব ছিল, তাঁদের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে অন্তত জানতে চাওয়া হোক, কেন তাঁরা বিষয়টি দেখলেন না। এই কর্তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অন্তত মনে করিয়ে দেওয়া হোক।