বান্দরবানে পাঁচতারা পর্যটনকেন্দ্র

বান্দরবান থেকে থানচি যাওয়ার পথেই পড়ে চিম্বুক রেঞ্জ। এই পর্বতমালারই নাইতং পাহাড়ে বড়সড় একটা পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘ম্যারিয়ট চন্দ্রপাহাড় রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক’ নামের এ পর্যটনকেন্দ্রে পাঁচতারা হোটেল ছাড়াও থাকবে ১২টি আলাদা ভিলা। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যাওয়ার জন্য থাকবে কেব্‌ল কার। সত্যি বলতে কি, নীলগিরি রিসোর্ট পর্যন্ত কেব্‌ল কার নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও নাকি তাদের আছে। এ ছাড়া থাকবে নানা ধরনের বিনোদন, রাইড ও সুইমিংপুল।

এমন পরিকল্পনাকে সাধারণভাবে দারুণ পরিকল্পনা বলেই মনে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে এটা থামানোর জন্য কেন পথে নেমেছে স্থানীয় ম্রো জাতিসত্তা? উন্নয়ন কে না চায়? নিজের এলাকায় বড় আকারে পর্যটনকেন্দ্র হওয়া মানেই নতুন নতুন কাজের সুযোগ, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি। তাহলে কেন সেই উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে ম্রোরা?

ম্রোদের দাবি, মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাগান করার কথা বলে জায়গাগুলো বন্দোবস্ত নিয়েছে জেলা পরিষদ। ম্রোদের প্রধান জীবিকাই জুমচাষ। নানা ধরনের ফলের বাগান করে টিকে আছে তারা। এমনিতেই জুমচাষের জমি কমে যাচ্ছে। ওই এলাকা বেহাত হয়ে গেলে তাদের চাষের কোনো জমিই থাকবে না। তাদের এ আশঙ্কার পেছনে উদ্যোক্তাদের কিছু কর্মকাণ্ড উল্লেখ করেছে ম্রোরা। যেমন এখনই নির্ধারিত সীমানার চেয়ে আরও বেশি এলাকা ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে উদ্যোক্তারা। কেব্‌ল কারের জন্য নির্ধারিত জায়গাও এই হিসাবের বাইরে রাখা হয়েছে। নির্মাণস্থলের আশপাশে তাদের যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদের আশঙ্কা, এক হাজার একর জমি তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে ১০ হাজার মানুষ, তিনটি পাড়া।

তাই ম্রোরা মাঠে নেমেছে, প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। তাদের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছে হিল ট্র্যাক্টস কমিশন। বড় আকারের পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। যেকোনো ধরনের উন্নয়নকাজের আগে জনগোষ্ঠীর প্রভাবমুক্ত সম্মতি নিতে বলেছে তারা। আমরাও কথাটার ওপর জোর দিতে চাই। স্থানীয় জনসাধারণের অসম্মতিতে কিছু করা যাবে না। উন্নয়ন, পর্যটন যা কিছুই করা হোক, তাদের সম্মত করে, তাদের নিয়েই করতে হবে।