বার্ড ফ্লুর টিকা তৈরি হচ্ছে দেশে

গত এক দশকের বেশি সময় ধরে শস্য উৎপাদন ও প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে দেশের কৃষি বিশেষজ্ঞরা একের পর এক অভাবনীয় সাফল্যের খবর দিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহের কয়েকজন গবেষকের উদ্ভাবিত বার্ড ফ্লু রোগের টিকা ঝিনাইদহে তৈরি হচ্ছে, এমন খবরকে যুগান্তকারী বললে অত্যুক্তি হবে না। এটি দেশজ খামারি, তথা দেশবাসীর জন্য এক বিরাট সুখবর।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহের মাইক্রোবায়োলজি ও হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক মো. আলিমুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তিনজন গবেষক তিন বছর গবেষণা করে টিকাটি উদ্ভাবন করেছেন। ‘বাংলা বার্ড ফ্লু এইচ ৯ ভ্যাক’ নামের টিকাটি উৎপাদন ও বিপণনের অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন। টিকাটির পেটেন্ট, উৎপাদন ও বিপণন করছে ঝিনাইদহের এফএনএফ ফার্মাসিউটিক্যালস নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

বার্ড ফ্লু নামক মহামারিতে দেশের পোলট্রি শিল্প বেশ কয়েকবার হোঁচট খেয়েছে। একের পর এক ধাক্কার পর বিদেশ থেকে টিকা আমদানি করে পোলট্রিশিল্পকে কোনো রকমে টিকিয়ে রাখা গেছে।

এখন দেশেই পাওয়া যাবে এ টিকা, খরচও পড়বে কম। গবেষকদের দেওয়া তথ্য বলছে, বার্ড ফ্লু রোগ ঠেকাতে একটি মুরগিকে তিন ডোজ টিকা দিতে হয়। প্রতি ডোজের দাম পড়ে ছয় থেকে আট টাকা। কিন্তু দেশে উৎপাদিত প্রতি ডোজ টিকার দাম পড়ছে সাড়ে পাঁচ টাকা। তার মানে মুরগিপ্রতি অন্তত টিকায় দেড় টাকা খরচ কমবে। এতে খামারিদের খরচ কমে আসবে। উৎপাদন খরচ কমলে স্বাভাবিকভাবে মুরগির দামও কমে আসবে। এতে সরাসরি ভোক্তারা উপকৃত হবেন। এটি জাতীয় পুষ্টি অর্থনীতিতে তা দীর্ঘ মেয়াদে বড় ধরনের অবদান রাখবে।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, টিকাটি যে গবেষকেরা উদ্ভাবন করেছেন, তাঁরা এর আগে গরুর খুরা রোগের টিকা, গামবোরো টিকা, ফাউল কলেরা টিকা, রানীক্ষেত রোগের টিকাসহ কয়েকটি টিকা উৎপাদনেও সক্ষমতা দেখিয়েছেন। তার মানে আমাদের দেশের গবেষকেরা গবেষণা ও উদ্ভাবনে মোটেও পিছিয়ে নেই। এ বিষয় মাথায় রেখে সরকারের দিক থেকে এ খাতের গবেষকদের যাবতীয় সহায়তা দেওয়া দরকার। আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগারসহ আনুষঙ্গিক যাবতীয় সরঞ্জাম ও লোকবল সরবরাহে সরকারের ভূমিকা আরও বাড়াতে হবে।