বিপর্যস্ত উপকূল

সম্পাদকীয়

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বাংলাদেশে সরাসরি আঘাত না হানলেও গোটা উপকূলের জনজীবন অনেকটা বিপর্যস্ত করেছে। বিশেষ করে যেসব উপকূল অঞ্চলে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে কিংবা যেসব দ্বীপে বেড়িবাঁধ নেই, সেখানকার ঘরবাড়ি, শস্যখেত ও মাছের ঘের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে দ্রুত ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো প্রয়োজন।

গত বুধবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় ৯ জেলার ২৭ উপজেলার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই উপজেলাগুলো হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ২৭টি উপজেলা। ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা দিতে ১৬ হাজার ৫০০ শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়ার কথাও জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী ত্রাণসামগ্রীর যে হিসাব দিয়েছেন, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা যায়, উপকূলে লাখ লাখ লোক পানিবন্দী। হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া। এই সামান্য সাহায্য কতজনকে দেওয়া যাবে? ইয়াস সরাসরি আঘাত হানেনি সত্য; কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। সাতক্ষীরা থেকে সেন্ট মার্টিন উপকূলের এমন কোনো এলাকা নেই, যেখানে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেনি। অনেকে ঘরে ফিরতে পারেনি। বাঁধের ওপর অবস্থান করছে। অবিলম্বে তাদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে।

ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের ক্ষেত্রে কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও এনজিওর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে হতদরিদ্র মানুষগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের নড়বড়ে ঘর ঘূর্ণিঝড়ে উড়ে যায়, জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়। ঘরে যে সামান্য খাদ্যসামগ্রী থাকে, তা-ও অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও পুনর্বাসনের সময় এঁদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ঘূর্ণিঝড়দুর্গতদের জন্য। সেখানে ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গত মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেই নির্দেশ তামিলও হচ্ছে। বাংলাদেশে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছাতে না পারি, সরকারের ঘরে এসে যাতে কেউ বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

জরুরি ত্রাণসামগ্রী বিতরণের পর সরকারকে পুনর্বাসনের প্রতি নজর দিতে হবে। জোয়ারের পানি নেমে যাওয়ার পর যাতে দুর্গত এলাকায় রোগব্যাধি ছড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।

আম্পান ও তারও আগে আইলা-সিডরে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, তাঁদের অনেককে এখনো পুনর্বাসিত করা যায়নি। ভেঙে যাওয়া বাঁধও মেরামত করা হয়নি। চিংড়িঘের ও শস্যখেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় স্থানীয় অর্থনীতির চাকাও অনেকটা স্থবির। এ অবস্থায় উপকূলে জোরেশোরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করতে হবে। উপকূলের বেশির ভাগই মানুষ গরিব। তাদের কাছে এমন কোনো সঞ্চয় নেই, যা দিয়ে দু-তিন মাস
চলতে পারে। অতএব, তাদের উপকূলীয় এলাকায় এমন কিছু করতে হবে, যাতে অধিকসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাজালের অধীনে যেসব কর্মসূচি আছে, সেগুলোও জোরদার করতে হবে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব বেশি। যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের সবার আগে সহায়তা দিতে হবে।