বিমানবন্দরে নষ্ট স্ক্যানার

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্ক্যানার বিকল হওয়া একটি ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতার নজির। বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে দুটি এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন স্ক্যানার (ইডিএস) পাঁচ দিন ধরে বিকল থাকা এবং তার পরিবর্তে কুকুর দিয়ে কাজ চালানোর অবস্থাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ঢাকার বাইরে সিলেটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্ক্যানার দিয়েও সবজি ইত্যাদি রপ্তানি হয়। সেখানেও এর আগে দায়িত্বে অবহেলার কারণে স্ক্যানার বিকল হওয়া এবং রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এভাবে ঘন ঘন স্ক্যানার বিকল হয়ে রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অবশ্যই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কর্তব্যে অবহেলার উদাহরণ। এটা কোনো রকেটবিজ্ঞান নয়। এটা বারবার কেন ঘটছে, তা বোঝার জন্য কোনো তদন্ত কমিটি গঠনের দরকার পড়ে না। সাধারণ জ্ঞানই বলে দেবে, রুটিন রক্ষণাবেক্ষণ এবং যত্ন–আত্তির যে স্বাভাবিক ব্যাপার আছে, সেটা পালন করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা অভ্যাসগতভাবে উদাসীন। এবং এটাও পরিষ্কার যে তাঁরা এসব নির্বিকারভাবে করতে পারেন। কারণ, তাঁরা নিশ্চিত জানেন, এ জন্য তাঁদের কোনো কৈফিয়ত দিতে হবে না। জবাবদিহির কোনো বিষয় নেই। রপ্তানিমুখী কার্গো পণ্য তল্লাশিতে মান না থাকার কারণে যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। মাত্র দুই বছর না যেতেই আবার সংকট তৈরি হলো।

কোভিড–১৯ পরিস্থিতি গোটা বিশ্ববাণিজ্যকে বিপর্যস্ত করেছে। রপ্তানির বাজারে নানা ধরনের প্রতিকূলতা এবং নতুন নতুন ঝুঁকি, চাপ এবং অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ঐতিহ্যগত বাজার বা ক্রেতাদের মধ্যে নানামুখী প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে স্ক্যানার নষ্ট থাকায় প্রতিদিন ১০ মেট্রিক টন সবজি বিমানবন্দর থেকে ফেরত আসছে। এবং তা স্বল্প মূল্যে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন রপ্তানিকারকেরা। বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের সবজির জন্য বসে থাকবেন না; বিকল্প উৎসের সেদিকে ছুটবেন। বাংলাদেশ হারাবে সবজি রপ্তানির বাজার, ক্ষতিগ্রস্ত হবে জাতীয় অর্থনীতি। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

বিষয়টি নিয়ে রপ্তানিকারক সমিতির একজন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির বক্তব্য হলো বিমানবন্দরে স্ক্যানার চালু করা হয়েছিল বেসরকারি খাতে। পরে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর দায়িত্ব নেয়। সমিতির ধারণা, তুলনামূলকভাবে উন্নত সেবা পেতে এর দায়িত্ব বেসরকারি খাতকে দেওয়াই উত্তম। তবে সরকারের দিক থেকে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি বজায় রাখতে হবে।

কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, সরকারি কর্তৃপক্ষ এ দায়িত্ব কেন যথাযথভাবে পালন করবে না? কর্তব্যে অবহেলার দায়ে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।স