বিশপ কার্যালয়ে হামলা

সিলেটের ক্যাথলিক বিশপ কার্যালয় নিয়ে কিছু লোক যে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। ক্যাথলিক ডায়োসিসের তরফে বলা হয়েছে, শহরের শাহপরান থানার সুরমা গেট এলাকার বিশপ কার্যালয়ের জমি দখলে এ পর্যন্ত চার দফা নানা ধরনের দুর্বৃত্তপনা হয়েছে। কোনো ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠানের প্রতি এ ধরনের হুমকি ও জমি দখলের ধারাবাহিক উদ্যোগ যে ধরনের সংবেদনশীলতার সঙ্গে সামাল দেওয়া উচিত, সেখানে ঘাটতি রয়েছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে ক্যাথলিক বিশপ কার্যালয় এলাকায় কিছু লোক প্রবেশের চেষ্টা চালায়। পাহারাদারদের চিৎকারে শেষ পর্যন্ত তারা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে দুটি চাপাতি উদ্ধার করে। এর আগে তিন-চার দিন ধরে এ বিশপ কার্যালয়কে ঘিরে যা ঘটেছে, তার ধারাবাহিকতাতেই যে এটা ঘটেছে, তাতে সন্দেহের কোনো কারণ নেই। বোঝা যায়, এ গোষ্ঠী একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরির পরিকল্পিত চেষ্টা শুরু করেছে।

বিশপ কার্যালয় এলাকার মধ্যে গত সোমবার নির্মাণকাজ শুরু হলে কিছু লোক সাইনবোর্ড টানিয়ে সেই জমি দখলের চেষ্টা চালায়। এরপর কিছু গাছপালা উপড়ে ফেলে। বিশপ কার্যালয় এ ঘটনায় ১৯ জনের নামে মামলা করেছে এবং পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এ চক্র থেমে থাকছে না এবং বৃহস্পতিবার রাতে বিশপ কার্যালয়ে চাপাতিসহ প্রবেশের চেষ্টা তারই প্রমাণ বহন করে।

ক্যাথলিক বিশপের কার্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০১৩ সালে কেনা জমিতে। এরপর ২০১৭ সালে ওই জমির মালিকানা দাবি করে একটি পক্ষ মামলা করেছিল, যা ২০১৯ সালে খারিজ হয়ে যায়। ফলে জমি নিয়ে বিরোধ বা বিতর্কের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে, এমনটিই ধরে নিতে হবে। এ পরিস্থিতিতে এখন যাঁরা ক্যাথলিক বিশপ কার্যালয়ের জমিতে সাইনবোর্ড লাগানোর চেষ্টা করছেন বা রাতে দুর্বৃত্তদের পাঠাচ্ছেন, তাঁরা স্পষ্টতই ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে কিছু আদায় করার চেষ্টা করছেন।

ক্যাথলিক বিশপ কার্যালয়ের জমিকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে যা ঘটছে, তাতে সেখানে বসবাস করছে, এমন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ আতঙ্ক দূর করার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। বিশপ কার্যালয়ের জমিতে সাইনবোর্ড লাগানোর চেষ্টার পর পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে বিশেষ ও সক্রিয় উদ্যোগ প্রত্যাশিত ছিল। সেটা না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে দুর্বৃত্তরা বিশপ কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা চালানোর সাহস পেয়েছে।

আমরা আশা করব, সিলেটের বিশপ কার্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ উদ্যোগ নেবে এবং একই সঙ্গে এর জমি দখলের চেষ্টায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।