‘বিশেষ বক্তার’ সম্মানী

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিনিময়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে ৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা খরচ করেছে, তা নিয়ে অডিট আপত্তি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন অডিট অধিদপ্তর। তারা বলেছে, নির্বাচনী প্রশিক্ষণের জন্য কোর্স উপদেষ্টা, বিশেষ বক্তাসহ ইসির তৈরি করা কয়েকটি পদ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত নয়। ওই ভাতা প্রদানের ফলে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অডিট বিভাগ ইসির কাছে জবাব চেয়েছে এবং জবাব দিতে না পারলে টাকা ফেরত দিতে বলেছে।

অডিট আপত্তির বরাত দিয়ে মঙ্গলবার প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, অনুমোদিত পদের বাইরে ওই পদ সৃষ্টি করে ভাতা পরিশোধ করায় ১৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আরেকটি আপত্তিতে বলা হয়েছে, তৎকালীন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান এবং নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের তৎকালীন মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক ‘বিশেষ বক্তার’ ভাতা হিসেবে নিয়েছেন ১২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। অনুমোদিত পদের বাইরে বিশেষ বক্তার ভাতা পরিশোধ করায় সরকারের ১২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া কোর্স পরিচালক পদে অতিরিক্ত সম্মানী নেওয়ায় ১৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বিশেষ বক্তার তালিকায় ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির তৎকালীন সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবেরা। ‘সুপারভাইজিং’ প্রশিক্ষক পদে ছিলেন তৎকালীন ইসির উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, সব জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং সংশ্লিষ্ট নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এ ছাড়া কোর্স মনিটরিং অফিসার, সহকারী কোর্স সমন্বয়ক, আঞ্চলিক কোর্স সমন্বয়ক, অতিরিক্ত আঞ্চলিক কোর্স সমন্বয়ক, জেলা কোর্স সমন্বয়ক ও অতিরিক্ত জেলা কোর্স সমন্বয়ক নামেও পদ ছিল।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রশিক্ষণে ‘কোর্স উপদেষ্টা’ ও তৎকালীন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ আত্মপক্ষ সাফাই হাইতে গিয়ে বলেছেন, ইসি এই বাজেট অনুমোদন করতে পারে। নির্বাচনী প্রশিক্ষণের জন্য যে ব্যয় হয়েছে, তা ইসি অনুমোদিত। অন্যদিকে সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এম হাফিজউদ্দিন খান বলেছেন, স্বাধীন প্রতিষ্ঠান নিজেরা বেতন-ভাতা দিতে পারে না। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন।

ইসির সাবেক সচিবের বক্তব্য অযৌক্তিক বলে আমরা মনে করি। বিশেষ বক্তার পদ তৈরি করার জন্য ‘স্বাধীন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। এটি করা হয়েছিল এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির কাজ যাতে সরকার বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য। ২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট প্রথম আলোয় বিশেষ বক্তার নামে নির্বাচন কমিশনের পদাধিকারীদের আর্থিক অপচয় নিয়ে খবর বের হলে তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। গত বছর ১৪ ডিসেম্বর এরপর ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশনের আর্থিক ও নির্বাচনসংক্রান্ত গুরুতর অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতে বলেন। জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। এখন খোদ সরকারের অডিট আপত্তি অধিদপ্তর আপত্তি জানিয়েছে। ইসির পদাধিকারীরা কী বলবেন?