বেড়িবাঁধ সংস্কার

খুলনার কয়রা এমন একটি জনপদ, যার বুক চিরে কয়রা, শাকবাড়িয়া ও কপোতাক্ষ বয়ে গেছে। বঙ্গোপসাগর সন্নিহিত হওয়ার কারণে এই তিনটি নদীই প্রমত্তা, দেশের আর দশটা নদীর মতো মরে যেতে বসেনি। আর এই তিন নদী কয়রার ভূখণ্ডে এমনভাবে প্রবহমান, যাতে কিছু অঞ্চলের মানুষের জীবনে বন্যা সংরক্ষণ বাঁধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বন্যা হলেই তারা ভয়ে থাকে, তাও নয়। কয়রা উপজেলাবাসীর জীবনের আরেক বিপদ হলো বড় জোয়ার। এই জোয়ার যখন অনেক বড় আকারে আঘাত হানে, তখন তা কখনো বন্যার ক্ষতিকে হার মানাতে পারে।

সুতরাং কয়রায় শক্তিশালী এবং যথা উপযুক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিষয়টি মানুষের জানমাল রক্ষার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশের অনেক সাধারণ এলাকায় যে আটপৌরে দৃষ্টিভঙ্গিতে বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কারকে দেখা হয়, তার থেকে অনেক বেশি মাত্রায় কয়রার মতো উপজেলার বেড়িবাঁধ সংস্কারকে দেখতে হবে। অথচ সেই অগ্রাধিকার বা সংবেদনশীলতা অনুপস্থিত। খুলনার বিভাগীয় কমিশনার এবং ডেপুটি কমিশনারের উচিত হবে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা। এবং খুলনা অঞ্চলের অবকাঠামোগত পরিকল্পনার মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা।

আমরা বিস্মিত এবং বিক্ষুব্ধ হতে পারি যে সিডর ও আইলার সময় কয়রার বাঁধের যেসব স্থানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল, তা আজ পর্যন্ত আগের অবস্থাতেও ফিরিয়ে নেওয়া হয়নি। অথচ উচিত ছিল সিডর ও আইলার মতো বা তার চেয়ে বড় দুর্যোগ আবার আঘাত হানলেও তা যাতে কয়রাবাসীর জীবনকে লন্ডভন্ড না করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হলো, সিডর ও আইলার পরে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু স্থানে অস্থায়ী ভিত্তিতে বাঁধ মেরামত করা হলেও বাকি থাকে বেশির ভাগ এলাকা। দুই বছর আগে পাউবোর কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, বাঁধ ভাঙন রোধে নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। এবারে কয়রাবাসীকে প্রকৃতি রক্ষা করল। ফণী সজোরে আঘাত হানলে কয়রাবাসীকেই বেশি মাশুল দিতে হতো।

খুলনার প্রশাসনকে মনে রাখতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কিছু এলাকায় শক্তিশালী ও সুউচ্চ বাঁধ নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বাঁধ সংস্কার ও নদীভাঙন রোধে কয়রার সাতটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এতে তাঁরা বেড়িবাঁধ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পাউবোর সঙ্গে ইউপির যৌথভাবে কাজ করার যে সুযোগ পাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে, তা যথার্থ। ১০০ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫ কিলোমিটারের মেরামতকাজ অবিলম্বে শুরু করতে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ত্বরিত হস্তক্ষেপ কামনা করি। আশা করি কয়রার জনপ্রতিনিধিদের ঐক্যবদ্ধ আকুতির বিষয়টি লালফিতায় বন্দী থাকবে না।