বয়স্কদের প্রতি মানবিক হোন

সম্পাদকীয়

সন্তানকে বড় করাসহ সারা জীবন পরিবারের দায়িত্ব পালন করার পর প্রত্যেক মা-বাবাই চান শেষ বয়সটা অন্তত নিশ্চিন্তে কাটাবেন। সন্তানেরা পরিবারের হাল ধরবে, বয়স্ক মা–বাবার সেবা করবে, এটি তো আমাদের সামাজিক নৈতিকতা ও পারিবারিক দায়বোধেরই অংশ। প্রতিটি ধর্মেও মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব পালনে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। স্কুলের পাঠ্যবইয়ে পড়ার আগে এসব নীতিকথা আমরা জেনে যাই। তাই বলে সবাই যে মানেন না তা কিন্তু নয়। বয়স্ক মা-বাবাকে সংসারের বোঝা মনে করার প্রবণতাও আমাদের সমাজে দেখা যায়। অনেক সময় সন্তানের ঘরে ঠাঁই হয় না তাঁদের। খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় এমন একটি অমানবিক ঘটনা ঘটল। চার ছেলের কেউ দায়িত্ব নিতে রাজি হলো না অশীতিপর মা–বাবাকে। ভয়াবহ এক মহামারির মধ্যেও মানুষের এমন নির্মমতা সত্যিই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গদাইপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মেছের আলী (৯৫) আর তাঁর স্ত্রী সোনাভান (৮৬)। বয়সের ভারে আর অসুখে তেমন হাঁটাচলা ও কাজকর্ম করতে পারেন না তাঁরা। এই দম্পতির চার ছেলে। সব জায়গা-জমিও ছেলেদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। এখন কোনো ছেলের ঘরেই আর আশ্রয় হয় না তাঁদের। এমনকি দুই দিন রাস্তার ধারে বাজারের এক দোকানের ছাউনিতে থাকতে হয়েছে দুজনকে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওই বয়স্ক দম্পতিকে উদ্ধার করেন। ছেলেরা তাঁদের দায়িত্ব নেবে কী, এ নিয়ে উল্টো নিজেদের মধ্যে মারামারির অবস্থা। পরে মেছের ও সোনাভানকে জোর করে বড় ছেলের ঘরে তুলে দেওয়া হয়। মারামারি এড়াতে বাকি তিন ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

করোনা মহামারিতে বয়স্ক মানুষকেই বেশি হারাচ্ছি আমরা। তঁাদের হারানোর ব্যথা কোন সন্তান ভুলতে পারে আজীবন? আসুন, মা-বাবাসহ পরিবারের যেকোনো বয়স্ক মানুষের প্রতি আমরা আরও বেশি দায়িত্বশীল হই, আরও মানবিক হই।

ইউএনও নিজে বয়স্ক এই দম্পতিকে ২০ কেজি চালসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী ও জিনিসপত্র কিনে দেন। ওই দুজনের থাকা-খাওয়ার খরচ এখন থেকে বহনের ঘোষণা দেন তিনি। আমরা তাঁর এমন মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানালেন, এত বয়স হওয়ার পরও কোনো বয়স্ক ভাতা পেতেন না মেছের ও সোনাভান। সেটি পেলে আজ তাঁদের এমন পরিস্থিতি হতো না। আশা করি স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব দেবে।

গত মাসে উঠানে বাবার মৃতদেহ ফেলে রেখে সন্তানেরা সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হন। ২৭ ঘণ্টা পর সেই মৃতদেহ দাফন করা হয়। এমন ঘটনাও প্রথম আলোর প্রতিবেদনে আমরা পাই। করোনা মহামারিতে বয়স্ক মানুষকেই বেশি হারাচ্ছি আমরা। তঁাদের হারানোর ব্যথা কোন সন্তান ভুলতে পারে আজীবন? আসুন, মা-বাবাসহ পরিবারের যেকোনো বয়স্ক মানুষের প্রতি আমরা আরও বেশি দায়িত্বশীল হই, আরও মানবিক হই।