ভোজ্যতেলের দাম

ভোজ্যতেল উৎপাদন ও বিতরণকারী কোম্পানিগুলো যখন বোতলজাত সয়াবিনের দাম প্রতি লিটার ১৩৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল, তখনই বাজারে এর চার-পাঁচ টাকা বেশি দামে বিক্রি হতো। গত ১০ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেই এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। ১৯ এপ্রিল কোম্পানিগুলোর সমিতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড কমিশনকে চিঠি দিয়ে আবার জানায়, এতে তাদের পোষাচ্ছে না। ভোজ্যতেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা বাড়াতে হবে। ভোজ্যতেল উৎপাদক ও বিতরণকারী সমিতির সর্বশেষ ঘোষণার পর ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে প্রথম আলোর প্রতিবেদক দেখতে পান, আগে থেকেই দোকানিরা দাম বাড়িয়ে রেখেছেন। আগের নির্ধারিত দামে কেউ বিক্রি করছেন না। কোম্পানিগুলো যে তারিখে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে চিঠি দিয়েছে, তার আগে সরবরাহ করা তেল প্রতি লিটার ১৩৯ টাকায় বিক্রি করার কথা। কিন্তু তারা তা করেনি। বাজার তদারক করারও কেউ নেই।

দ্বিতীয় দফা করোনার ঢেউয়ের কারণে যখন সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে, তখনই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হলো। চাল-ডালের মতো ভোজ্যতেলও একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এ অবস্থায় দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষগুলো যাবে কোথায়?

ভোজ্যতেলের পাশাপাশি বাজারে শাকসবজি, ইফতারসামগ্রী ও মসলার দামও চড়া। গ্রীষ্মকালীন সবজি প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গরিব মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়।

একটি বিকল্প হতে পারত টিসিবি। কিন্তু শুরু থেকেই সরকার এ প্রতিষ্ঠানকে অকেজো করে রেখেছে। অথচ গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষের জন্য টিসিবি হতে পারত শেষ ভরসাস্থল। রোজার সময় টিসিবি ভোজ্যতেল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজসহ কিছু পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এতই কম যে বাজারে তা কোনো প্রভাবই ফেলতে পারছে না। ফলে ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন পণ্যের বাজার সিন্ডিকেটের দখলে।

রোজার অনেক আগে থেকে বাজারে চালের দামও বেড়েছিল। সরকারি গুদামে চালের মজুত কম থাকায় বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অনেকটা চালকলমালিক ও ব্যবসায়ীদের হাতে। তাঁরা নিজেদের স্বার্থে সরবরাহ বাড়ান, সরবরাহ কমান। বোরো ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে, আমদানি করা চাল বাজারে চলে এসেছে, তারপরও বাজারে তেমন প্রভাব না পড়াটা অস্বাভাবিক। অনেক দিন ধরে চালের দাম বাড়তির দিকে থাকার পর অতিসম্প্রতি কেজিপ্রতি মাত্র ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে। এ ক্ষেত্রেও সরকারের ভুল নীতি দায়ী। সরকারি গুদামে চালের মজুত সন্তোষজনক হলে চালকলমালিক ও ব্যবসায়ীরা ছড়ি ঘোরাতে পারতেন না।

এ অবস্থায় অন্তত ঈদের আগে সরকারের উচিত টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, ডাল ইত্যাদি বিক্রির পরিমাণ বাড়ানো। একই সঙ্গে বাজার তদারক করা। তরমুজের বাজারে অভিযান চালানো বা ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানোর চেয়ে ভোজ্যতেল ও চালের বাজারের দিকে মনোযোগ দেওয়া অনেক বেশি জরুরি।