ভোক্তা অধিকার আইন

সম্পাদকীয়

২০০৯ সালে যখন ভোক্তা অধিকার আইন জারি হয়, তখন ই-কমার্স বা অনলাইনে বেচাকেনা তেমন ছিল না। সাম্প্রতিক কালে অনলাইনে কেনাবেচা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ক্রেতার স্বার্থ সুরক্ষার কোনো নীতিমালা না থাকায় বিক্রেতা বা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছেমতো শর্ত আরোপ করে চলেছে, যে কারণে ক্রেতা বা সেবাগ্রহীতারা প্রতারিত হলেও প্রতিকার পাচ্ছেন না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে অনলাইন ব্যবসা বা ই-কমার্সের যত প্রসার ঘটছে, ভোক্তাদের প্রতারিত হওয়ার অভিযোগও তত বাড়ছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৮ হাজার ৪১৬টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মতে, ভুক্তভোগীদের খুব কমই প্রতিকার চাইতে অধিদপ্তরে যান। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ সময়মতো পণ্য না দেওয়ার। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালির ওয়েবসাইটে ৪ হাজার ৬০০ এবং দারাজের ওয়েবসাইটে ৬ হাজার ৬০০ শব্দে শর্ত লেখা আছে। দুটোর ভাষাই ইংরেজি, সাধারণ ক্রেতার পক্ষে বোঝা কঠিন। তাদের শর্তের মধ্যে আছে, পণ্যের মজুত থাকা সাপেক্ষে সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া যেকোনো সময় চুক্তি বাতিল ও অনিবার্য কারণে পণ্য সরবরাহ বিলম্বিত হতে পারে বলেও প্রতিষ্ঠানগুলো শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এসব পুরোপুরি ক্রেতার স্বার্থের পরিপন্থী।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী, ক্রেতা যেসব বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন, তা হলো বিক্রেতার পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করা, মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করা, সেবার তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা, অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা, পণ্য মজুত করা, ভেজাল পণ্য বিক্রয়, খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা প্রতারণা, প্রতিশ্রুত পণ্য সরবরাহ না করা, ওজনে ও পরিমাপে কারচুপি, দৈর্ঘ্য পরিমাপের ক্ষেত্রে গজফিতায় কারচুপি, নকল পণ্য প্রস্তুত, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয়, অবহেলা।

সমস্যা হলো দেশের বেশির ভাগ ক্রেতাই জানেন না প্রতিকার কোথায় ও কীভাবে চাইতে হবে। আর চাইলেই যে প্রতিকার পাওয়া যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই। আইনানুযায়ী প্রতিটি জেলায় এর অধিদপ্তরের অফিস থাকার কথা। কিন্তু ১৫টি জেলায় কোনো অফিস নেই, পাশের জেলার অফিস দিয়ে কাজ চালানো হয়।

আইনে ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য সরবরাহের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির কথা বলা আছে, যা অনেকটা ‘কাজির গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই’-এর মতো। ২০০৪ সাল থেকে ভেজালবিরোধী অভিযান চলে এলেও পরিস্থিতির খুব উন্নতি হয়েছে বলা যাবে না। কোনো পণ্যের মান নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে ভোক্তা অধিদপ্তর নড়েচড়ে বসে। এরপর সবকিছু আগের মতো চলতে থাকে।

এই প্রেক্ষাপটে ক্যাব যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ সংশোধন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে আরও জনবান্ধব ও শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছে, তা খুবই যৌক্তিক। ভোক্তা যাতে সব ধরনের অভিযোগ অনলাইনে দায়ের করতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।

সঠিক দাম, মাপ ও মানের পণ্য পাওয়া ভোক্তার অধিকার। পদে পদে তাঁরা বঞ্চনা ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। অনেক সময় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আদালতে রিট করে ভোক্তার আইনি অধিকার খর্ব করে থাকে। সে ক্ষেত্রেও মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।