মশকনিধন

গত ৮ থেকে ১৬ মার্চ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মশা মারতে মাঠে ছিলেন ১২ শ কর্মী। অভিযান নিয়মিত তদারক করেছেন স্বয়ং মেয়র আতিকুল ইসলাম। এত যে তোড়জোড়, এত আয়োজন, তারপরও কিন্তু মশা কমেনি। কিন্তু কেন? রহস্য কী?

রহস্য ভেদ করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি পর্যবেক্ষক দলের সদস্যরা। পর্যবেক্ষণের ফলাফল একটা প্রতিবেদন আকারে মেয়রকে জমাও দিয়েছেন তঁারা। প্রতিবেদনের সারকথা হলো, কামান দাগা হচ্ছে কিন্তু লক্ষ্যভেদ হচ্ছে না। কিংবা কামান দাগা হচ্ছে এমন সময়, শত্রু যখন মাঠেই নেই। আর ভালো প্রশিক্ষণ না থাকায় কামানবাজদের ছোড়া বেশির ভাগ গোলাই বেজায়গায় পড়ছে।

বর্তমানে দুইভাবে মশা মারা হয়। লার্ভিসাইডের প্রজননক্ষেত্রে স্প্রে করে লার্ভা অবস্থায় অঙ্কুরেই নিধন করা হয় মশা। পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন বলছে, ৬৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই লার্ভিসাইড কাজ করেনি। কারণ কিন্তু এই না যে ওষুধ অকার্যকর। কারণ, প্রজননক্ষেত্রে জমে থাকা ময়লা–আবর্জনা। ফলে ওষুধ ঠিকমতো সব জায়গায় ছড়াতে পারেনি। লার্ভা কম মরার আরেকটা কারণ কর্মীদের অজ্ঞতা। ভোরে আলো তীব্র হওয়ার আগে স্প্রে করার কথা থাকলেও অধিকাংশ সময়ই তা করা হয় তীব্র আলোতে।

অন্যদিকে অ্যাডাল্টিসাইডের লক্ষ্য পূর্ণবয়স্ক মশা। এই প্রক্রিয়ায় ধোঁয়া ছুড়ে মরেছে মাত্র ৫৭ শতাংশ। মশা কম মরার একটা কারণ অসময়ে ফগিং। ধোঁয়া মারার উপযুক্ত সময় সূর্যাস্তের আধা বা এক ঘণ্টা আগে থেকে শুরু করে সূর্যাস্তের আধা বা এক ঘণ্টা পর পর্যন্ত। অথচ বিকেল চারটা থেকেই শুরু হয়ে যায় ফগিং, যা শুধু ধোঁয়াই উৎপন্ন করেছে, কাজের কাজ কিছু হয়নি।

মশকনিধনে নিয়োজিত কর্মীদের অধিকাংশই অদক্ষ। এ কাজে দরকার প্রশিক্ষিত কর্মী। কখন ওষুধ দিতে হবে, কোথায় দিতে হবে, কতটুকু দিতে হবে—এ সবই তঁাকে জানতে হবে। স্প্রে বা ধোঁয়া দেওয়ার সময় কী গতিতে হাঁটতে হবে, সেটাও একটা জরুরি বিষয়। সুতরাং প্রশিক্ষিত কর্মীর বিকল্প নেই। আর দরকার নিবেদিতপ্রাণ প্রশিক্ষিত সুপারভাইজার। সুপারভাইজার দক্ষ, সৎ ও নিবেদিত হলে অদক্ষ কর্মী বাহিনী দিয়েও কাজ চালানো যায়।

মশকনিধনে ভেহিকেল মাউন্টেড ফগার মেশিনের ব্যবহার বাড়াতে হবে। ঠিক সময়ে ফগিং করতে হবে। লার্ভার বড় বড় প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত করতে হবে, সেগুলো আগে পরিষ্কার পরে স্প্রে করতে হবে। দুটো কাজই নিয়মিতভাবে করতে হবে।