মাঠে শিক্ষার্থীদের রাতযাপন

সম্পাদকীয়

শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সে জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৩ মার্চ সব ছাত্রাবাস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তারা শর্ত দিয়েছে, পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের হল ছেড়ে দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যখন শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা ভেবে ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এর আগেই দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পরীক্ষা শুরু হলেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসগুলো না খোলা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। প্রথম আলোর কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধির পাঠানো সচিত্র প্রতিবেদনে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মাঠে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা ৬০–৭০ জন শিক্ষার্থী তোশক, কাঁথা, বালিশ ও কম্বল নিয়ে হোস্টেলের সামনে মাঠেই অনশন ও রাত যাপন করছেন। যেসব শিক্ষার্থী দূরদূরান্ত থেকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা দিতে এসেছেন, তাঁদের থাকার কোনো জায়গা নেই। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা অধিদপ্তর পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে, কিন্তু ছাত্রাবাস খোলার অনুমতি দেননি। তাহলে কীভাবে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবেন? হঠাৎ এতজন শিক্ষার্থীর মেসবাড়িতে আশ্রয় নেওয়াও সম্ভব নয়।

কিশোরগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোহা. আবদুর রকিব বলেছেন, তঁাদের কিছু করার নেই। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া ছাত্রাবাস খোলা যাচ্ছে না। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, দূরদূরান্তের শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে হোস্টেল খুলে দেওয়া উচিত। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, যত দিন ছাত্রাবাস খুলে না দেওয়া হবে, তত দিন তাঁরা মাঠেই রাত যাপন করবেন। তাঁরাও হোস্টেল খুলে দেওয়ার জন্য বারবার আবেদন করছেন। রোববার অনেক শিক্ষার্থীর ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ সেমিস্টারের চূড়ান্ত লিখিত পরীক্ষা হবে।

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের হোস্টেল সুপার কামরুল হাসানের ভাষ্য হলো, কারিগরি বোর্ড প্রায় দেড় মাস আগে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তাঁরা হোস্টেল খুলে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।

এই সমস্যা শুধু কিশোরগঞ্জ পলিটেকনিকে নয়, অন্যান্য স্থানেও শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে গিয়ে বিপদে পড়েছেন। সরকার পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে, অথচ ছাত্রাবাস বন্ধ রেখেছে। এই সিদ্ধান্ত কেন? খোলা মাঠে কোনো শিক্ষার্থী বিপদে বা অসুস্থ হয়ে পড়লে কী জবাব দেবে তারা?

অবিলম্বে সব পলিটেকনিকের ছাত্রাবাস খুলে দেওয়া হোক। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও ভাবতে হবে।