মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ

বাংলাদেশের কৃষক উদ্যমী ও সৃজনশীল। হরিধান আমাদের কৃষকেরই আবিষ্কার। যে পদ্ধতিতে কৃষিপণ্য চাষ করলে বেশি ফলন পাওয়া যায়, সেই পদ্ধতি অনুসরণ করতে কৃষকেরা মোটেই কুণ্ঠিত নন।

এ রকমই একজন কৃষক হলেন খুলনার বটিয়াঘাটার তারেক মাহমুদ। প্রতিবছর রবিশস্যের মৌসুমে জমি ইজারা নিয়ে তরমুজ চাষ করেন তিনি। এবার চাষ মৌসুম শুরু হওয়ার আগে এই কৃষক খুলনা মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণাকেন্দ্রে গিয়ে দেখেন, প্রতিষ্ঠানটি মালচিং পদ্ধতিতে মিষ্টিকুমড়ার চাষ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ওই পদ্ধতিতে চাষ করার সুবিধাগুলো জেনে নেন। পরে তিনি সাড়ে চার বিঘা জমিতে ওই পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করেন। বটিয়াঘাটায় অবস্থিত লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণাকেন্দ্রের পাশে ঘাগড়ামারী বিলে সাড়ে চার বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করে ভালো ফল পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।

মালচিং পদ্ধতি হলো মাটিতে পচনশীল একধরনের পলিথিন দিয়ে চাষের মাদাটি (বেড) ঢেকে দেওয়া। আর মালচিং কাগজ হলো একধরনের কাগজ, যার এক পাশে কালো ও অন্য পাশে রুপালি রং করা থাকে। কালো পাশ নিচে ও রুপালি পাশ ওপরের দিকে দিয়ে মাদাটি ঢেকে দিতে হয়। এভাবে মাটি ঢেকে দেওয়ার ফলে কালো রঙের প্রভাবে প্রচণ্ড সূর্যের তাপেও মাটির আর্দ্রতা শুকিয়ে যায় না। এ কারণে মাটিতে পানির পরিমাণ কম লাগে। অন্যদিকে মাটি ঢেকে থাকায় আগাছা হয় না। রুপালি পাশ ওপরে থাকায় পোকামাকড়ের উপদ্রবও তুলনামূলক কম হয়।

তারেক মাহমুদের ভাষ্যমতে, তরমুজের চারা রোপণ করে একবার ও ১৯ দিন পর আরেকবার পানি দিয়েছেন। বর্তমানে চারার বয়স দেড় মাস হলেও জমিতে তদারকির প্রয়োজন হয় না। জমিতে কোনো আগাছা ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়নি। কিন্তু তিনি মালচিং ছাড়া যে দেড় বিঘা জমি চাষ করছেন, সেখানে সপ্তাহে একবার পানি দিতে হচ্ছে। ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ায় ৬০০টির মতো চারা উপড়ে ফেলতে হয়েছে। তাঁর প্রত্যাশা, মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা জমিতে সেকেলে পদ্ধতির চেয়ে বেশি ফলন পাবেন।

খুলনা মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেছেন, মালচিং পদ্ধতি দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকার কৃষিতে বিপ্লব আনতে পারে।

এ পদ্ধতির তিনটি সুবিধা যথাক্রমে পানি কম লাগে, পোকামাকড়ের উপদ্রব কম এবং আগাছা হয় না। ফলে কৃষকের খরচ ও শ্রমও কম লাগে। এখন কৃষি বিভাগের দায়িত্ব এ পদ্ধতি উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় করা। কেবল খুলনা নয়, পুরো উপকূল অঞ্চলেই মালচিং পদ্ধতির চাষ ছড়িয়ে পড়ুক। লবণাক্তপ্রবণ এলাকার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটুক।