মুক্তিযুদ্ধে দুই বিদেশি সাংবাদিকের অবদান

সৈয়দ জিয়াউর রহমান

বাংলাদেশের দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ একটা বড় শক্তি ছিল বিদেশিদের সমর্থন-সহযোগিতা। এই সহযোগিতা-সমর্থন এসেছে বিশ্বব্যাপী সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিক, সমাজসেবী, শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিক—নানা স্তরের মানুষের কাছ থেকে। ইতিমধ্যে তাঁদের কিছুসংখ্যককে কৃতজ্ঞ বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা হয়েছে। তাঁরা সবাই সুপরিচিত বাংলাদেশে এবং তাঁদের সাহায্য-সমর্থন বহুল আলোচিত গণমাধ্যমে। কিন্তু এমন কিছু বিদেশিও ছিলেন, যাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা জুগিয়েছেন লোক-লোচনের অন্তরালে—নীরবে, নিঃশব্দে। তাঁরা অপরিচিত রয়ে গেছেন বাংলার মানুষের কাছে।

তাঁদের দুজনকে নিয়ে আজকের এই নিবন্ধ।একজন—ডোনাল্ড উইভার। ইনি ছিলেন সাংবাদিক—দিল্লিতে ভয়েস অব আমেরিকার দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরোর প্রধান। উইভার একাত্তরের মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসেছিলেন ঢাকায় জেনারেল ইয়াহিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের নেতাদের আলোচনার খবরাখবর সংগ্রহের জন্য। মার্চ মাসের ২৩ তারিখে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তাঁর ধানমন্ডির বাড়িতে। ওই সাক্ষাৎকারে শেখ সাহেব বলেছিলেন, ‘বাংলার মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন আমরা জীবনের সর্বোচ্চ মূল্য দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’ আমি তখন ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো দিকে তোপখানা রোডে ইউএসআইএস-এর তথ্য-প্রকাশনা বিভাগে দুটি পত্রিকা সম্পাদনার কাজে নিয়োজিত।

২৪ তারিখে ডন উইভার ইউএসআইএসে এসে তাঁর টেপরেকর্ডারে ধারণ করা এই সাক্ষাৎকারটি শুনিয়ে গেলেন আমাদের।তার পরদিন ২৫ মার্চ শুরু হলো নারকীয় তাণ্ডব। উইভারকে অন্য আরও বিদেশি সাংবাদিকের সঙ্গে আটকে রাখা হয় ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে। পরদিন সকালে তাঁদের বন্দুকের নলের মুখে গাড়িতে উঠিয়ে তেজগাঁও বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ বিমানে তুলে দেওয়া হয়। তার আগে কেড়ে নেওয়া হয় তাঁদের ক্যামেরার সব ফিল্ম আর রেকর্ডারের সব টেপ। বিদেশি সাংবাদিকদের নিয়ে ওই বিমানটিকে...যেতে হয় শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে যাত্রাবিরতি করে—আকাশপথে ভারতের ওপর দিয়ে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞার কারণে।ডন উইভার কলম্বোতে নেমেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে টেলিফোন-বার্তায় ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের বিস্তারিত তথ্য পরিবেশন করেন। বহির্বিশ্বের কাছে এটিই বাংলাদেশে পাকিস্তানি তাণ্ডবের প্রথম প্রকাশিত তথ্য।

১৯৭৬ সালে আমি যখন ওয়াশিংটনে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগে যোগ দিই, তখন ডন উইভার ছিলেন ভিওএর দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান। সে সময় একদিন তাঁর একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করতে চেয়েছিলাম বাইরের দুনিয়ায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি গণহত্যার এই প্রথম সংবাদ প্রচারের বিষয় নিয়ে। ডন উইভার রাজি হননি। বলেছিলেন—তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন একজন বিবেকবান সাংবাদিক হিসেবে এবং একজন ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক হিসেবে তা নিয়ে তিনি কোনো আত্মপ্রচারণায় যেতে চান না। কলম্বো থেকে পাঠানো সাংবাদিক ডন উইভারের খবরেই বিশ্ববাসী প্রথম জানতে পারে বাংলাদেশে ২৫ মার্চের রাতের ভয়াবহ পৈশাচিক ঘটনাবলির কথা।আরেকজন—গ্র্যান্ট পার। ১৯৭১-এ তিনি ছিলেন ইউএসআইএসের একজন তথ্য কর্মকর্তা। সে সময় আমেরিকার বিখ্যাত সংবাদ সাময়িকী টাইমস-এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল—‘পাকিস্তানে আমেরিকান দূতাবাস, ইউএসআইএস, সাহায্য সংস্থা এআইডি ও অন্যান্য সংস্থায় যেসব আমেরিকান কর্মরত, তাঁরা দুই শ্রেণীতে বিভক্ত।

যাঁরা লাহোর-পিন্ডিতে তাঁরা পরিচিত ‘পাঞ্জাবি-আমেরিকান’—আর যাঁরা ঢাকায় কর্মরত, তাঁরা পরিচিত ‘বাঙালি-আমেরিকান’ হিসেবে। সেই দিক থেকে গ্র্যান্ট পার ছিলেন ‘বাঙালি-আমেরিকান’। টাইম ম্যাগাজিনে বর্ণিত আমেরিকানদের এই পরিচিতির যথার্থতা আমরা সুস্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ করেছি মুক্তিযুদ্ধের সময়। এপ্রিল মাসের শেষ দিকে ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানে আমেরিকান তথ্য দপ্তরের কেন্দ্রীয় কর্মকর্তা অস্টিন ইসলামাবাদ থেকে।

তখন একদিন এক কর্মিসমাবেশে আমাদের সামনেই গ্র্যান্ট পার যখন কান্ট্রি ডিরেক্টর অস্টিনকে বলছিলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি সেনাদের অত্যাচারের কথা, তখন এককথায় সব উড়িয়ে দিয়ে অস্টিন বলেছিলেন, ‘এগুলো সব গুজব, আমি বিশ্বাস করি না এবং আপনারাও এই গুজবে কান দেবেন না।’ আমরা তাঁর এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম, কিন্তু তিনি কিছুতেই মেনে নেননি।

তার পর থেকে গ্র্যান্ট পারকে আমরা দেখেছি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন জোরালো সমর্থক হিসেবে। ঢাকার ইউএসআইএসে তখন কর্মীসংখ্যা ছিল আড়াই শর ওপরে এবং তার বেশ কিছুসংখ্যক ছিল অবাঙালি। গ্র্যান্ট পার এই অবাঙালি কর্মীদের এড়িয়ে সংগোপনে যোগাযোগ করতেন আমাদের সঙ্গে। একদিন উত্তেজিত হয়ে বাংলাদেশের একটি ম্যাপ হাতে করে এসেছেন আমার টেবিলে। বললেন, ‘তাড়াতাড়ি দেখিয়ে দাও “মাঠবাড়িয়া” কোথায়?’

আসলে মুক্তিবাহিনী বরিশালের মঠবাড়িয়ায় নদীতে পাকিস্তানি সেনাবোঝাই একটি লঞ্চ ডুবিয়ে দিয়েছে। এই তথ্য প্রকাশ করার সময় তাঁর চোখেমুখে যে উৎসাহ-উত্তেজনা লক্ষ করেছি, তা আজও আমার দৃশ্যপটে উজ্জ্বল।মুক্তিযুদ্ধের খবরাখবর জানার তাঁর গোপন সূত্র ছিল অনেক এবং সেসব সূত্রে যে তথ্য তিনি সংগ্রহ করতেন সেগুলো এবং সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ—এসব ঘটনার বিস্তারিত তথ্য প্রচলিত রীতি ভঙ্গ করে কূটনৈতিক তারবার্তায় নিয়মিত পাঠাতেন যুক্তরাষ্ট্র সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের প্রভাবশালী কয়েকজন সদস্যের কাছে। তাঁদের মধ্যে ম্যাসাচুসেটসের ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ও আইডাহোর সিনেটর ফ্রাঙ্ক চার্চ এবং ওহাইওর রিপাবলিকান সিনেটর উইলিয়াম স্যাকসবির সঙ্গে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠতা।

এই তিনজন সিনেটর বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সর্বাত্মক সমর্থন জুগিয়েছেন এবং সম্প্রতি কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাঁদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা হয়েছে। গ্র্যান্ট পার পাকিস্তানের প্রতি নিক্সন প্রশাসনের পক্ষপাত সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের কাছে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর পৈশাচিক নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরেছেন নিজের সরকারি চাকরির ঝুঁকি নিয়ে। তবে তাঁর পাঠানো তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই প্রশাসনের বিরোধিতা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে একটা শক্তিশালী সমর্থন গড়ে ওঠার পথ প্রশস্ত হয়।গ্র্যান্ট পার আরও কিছু সাহসী ভূমিকা পালন করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালে। তার একটির সঙ্গে তিনি জড়িয়েছিলেন আমাকে।

রাজধানী শহর ঢাকায় তখন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবেষ্টনী। সন্ধ্যার পর কেউ রাস্তায় বেরোতে সাহস করে না। সর্বত্র আতঙ্ক, প্রাণের ভয়, আরও আশঙ্কা—পাকিস্তানি সেনারা এবং তাদের দোসররা কখন কাকে ঘর থেকে উঠিয়ে নেয়। এই পরিস্থিতিতেই জারি হয়েছে গোটা শহরে কারফিউ—রাত নয়টা থেকে ভোর পাঁচটা। বিনা অনুমতিতে রাস্তায় বেরোলেই গুলি। এ সময় একদিন ইউএসআইএস অফিসে গ্র্যান্ট পার আমাকে টেলিফোনে বললেন—‘চুপচাপ আমার রুমে চলে এসো, জরুরি কথা আছে।’ তাঁর রুমে যাওয়ার পরেই বললেন, ‘দরোজা বন্ধ করে বসো।’ তারপর বললেন, ‘বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস যার দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট-এর দুই আমেরিকান সাংবাদিক ব্যাংকক থেকে ঢাকায় এসেছেন অনেক ঘাট পেরিয়ে। এখন তাঁরা হোটেলে আছেন। অফিস ছুটির পর সন্ধ্যায় তাঁদের নিয়ে আসব আমার রুমে। তাঁরা এখানে অপেক্ষা করবেন।’ তারপর বললেন, ‘রাত ১১টার দিকে যাব ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, সেখানে সংগোপনে চিকিৎসাধীন আছেন একজন মুক্তিযোদ্ধা এক চিকিৎসকের আশ্রয়ে।

তাঁকে সেখান থেকে নিয়ে আসব আমার অফিসে। আমেরিকান সাংবাদিকেরা তাঁর সাক্ষাৎকার নেবেন।’ আরও বললেন, ‘আর তাতে তোমাকে করতে হবে দোভাষীর কাজ। আমি তোমাকে তোমার বাড়ি থেকে উঠিয়ে নেব আমার গাড়িতে এবং তারপর যাব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তুমি প্রস্তুত থেকো।’আমি এতটা ভাবতে পারিনি। সেই মুহূর্তে কী বলব কিছুই বুঝতে না পেরে বসে থাকলাম নিশ্চুপ হয়ে। নীরবতা ভঙ্গ করলেন গ্র্যান্ট পার, বললেন, ‘ভয় পেয়ো না, আমি নিজে গাড়ি চালাব এবং আমার কূটনীতিকের গাড়িতে হাত দেওয়ার ক্ষমতা নেই কারও।’ ঢাকায় তখন বিদেশি কূটনীতিকদের গাড়ির নম্বরপ্লেট ছিল হলুদ বর্ণের এবং তাতে ইংরেজিতে বড় বড় করে ‘সি’ ‘সি’ অর্থাৎ ‘কনস্যুলার কোর’ কথাটা লেখা থাকত। শেষ পর্যন্ত রাজি হলাম।কিন্তু সমস্যা হলো গ্র্যান্ট পার যখন রাতে আমার বাড়িতে এলেন আমাকে উঠিয়ে নেওয়ার জন্য। আমরা তখন থাকতাম সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় চারদিকে ঘন গাছপালার বাগানবেষ্টিত দুর্গের মতো একটি বাড়িতে।

আমার বাবা-মা এবং স্ত্রী কিছুতেই রাজি নন অত রাতে কারফিউ চলাকালে বাইরে বেরোনোর। তার কিছুদিন আগে আমার ছোট ভাইয়ের কিছু বন্ধুবান্ধব অস্ত্রসহ ধরা পড়ার পর তাকে আমরা কোনোরকমে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়েছি। আজিমপুরে আমার শ্বশুরবাড়িতে আমার শ্যালক মুক্তিযোদ্ধাকে না পেয়ে পাকিস্তানিরা ধরে নিয়ে গেছে আমার স্ত্রীর বড় বোনের কলেজপড়ুয়া নিরীহ ছেলেকে (স্বাধীনতার পর জানা গেছে, পাকিস্তানি পশুরা তাকে হত্যা করে তার মৃতদেহ নিক্ষেপ করেছে নদীতে)।

আমার মেজো মামা চট্টগ্রামে নিযুক্ত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা কর্নেল সৈয়দ নাজিম হোসেনকে আটক করেছে পাকিস্তানিরা এবং তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমার আরেক মামা, আমার মায়ের খালাতো ভাই, কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাইকে যশোর ক্যান্টনমেন্টে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানিরা তাঁর মৃতদেহ পাঠিয়েছে ঢাকায়। এসব বিপর্যয়ের মধ্যে স্বভাবতই আমার মা-বাবা, স্ত্রী চাইছিলেন না আরেকটি বিপদ এসে পড়ুক পরিবারের ওপর।কিন্তু গ্র্যান্ট পার সক্ষম হলেন তাঁদের সুস্পষ্ট নিশ্চয়তা দিয়ে বোঝাতে যে, তাঁর গাড়িতে কোনো ভয় নেই এবং তিনি নিজে আমাকে ফেরত দিয়ে যাবেন বাড়িতে। শেষ পর্যন্ত সঙ্গী হলাম গ্র্যান্ট পারের দুঃসাহসী অভিযানে।কারফিউতে রাতের ঢাকা শহরের চেহারা ভয়াবহ। জন-প্রাণীর চিহ্ন নেই, মাঝেমধ্যেই কেবল সামরিক যানের আনাগোনা। তার মধ্যে গ্র্যান্ট পার প্রথমে গেলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেছনের গেটে। তারপর তোপখানা রোডে ইউএসআইএস দপ্তরে।

নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হলো তাঁর অভিযান।গ্র্যান্ট পার আর ডোনাল্ড উইভার জীবিত আছেন কি না জানি না, কারণ আজ থেকে ৪৩ বছর আগে তাঁরা ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব। তবে তাঁরা যেখানেই থাকুন, একটি বিপন্ন জাতির অতি দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোয় তাঁদের এই অনন্য স্মৃতি কোনোকালে বিস্মৃত হওয়ার নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসে তাঁদের অবদান অবিস্মরণীয়। সৈয়দ জিয়াউর রহমান: সাংবাদিক, ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের সাবেক সিনিয়র এডিটর।