মেডিকেলে বর্জ্যের ভাগাড়

করোনাকালে হাসপাতালে অক্সিজেনের চাহিদা মেটানোই যেখানে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে দূষিত বাতাসে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। করোনা ইউনিটের সামনেই ময়লা–আবর্জনার বিশাল ভাগাড়। সেটি অপসারণ তো দূরের কথা, আগুনে পুড়িয়ে পরিবেশকে আরও বিষাক্ত করে ফেলা হচ্ছে। বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটছে। মেডিকেল বর্জ্য এমনিতেই পরিবেশের জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলো অপসারণের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এভাবে ভাগাড় করে তোলা একই সঙ্গে গর্হিত ও পরিবেশবিরোধী কাজ। যার ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে করোনা রোগীদেরই। এমন পরিবেশে দেশের অন্যতম একটি বড় হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা চলছে। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে হাসপাতালটিতে বর্জ্য অপসারণ দেড় বছর বন্ধ ছিল। সংক্রমণ থেকে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সুরক্ষিত রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে সম্প্রতি পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা মূল হাসপাতাল ভবনের পেছনের ভাগাড়ের বর্জ্য অপসারণ শুরু করেছেন। কিন্তু করোনা ইউনিটের সামনের ভাগাড় থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে না। এসব বর্জ্য প্রায়ই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। উচ্ছিষ্ট খাবার, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, স্যালাইনের ব্যাগ, বিভিন্ন ওষুধের খোসা, গ্লাভস, প্লাস্টিক বোতল, মাস্ক, টিস্যু, পলিথিন, ওয়ান টাইম পণ্যসহ বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল বর্জ্য যখন পোড়ানো হয়, তখন ধোঁয়ায় করোনা ইউনিটে আসা রোগী ও স্বজনদের দম আটকে আসার অবস্থা হয়।

পাঁচতলাবিশিষ্ট করোনা ইউনিটটিতে তিন শতাধিক রোগী থাকছেন, আছেন তাঁদের স্বজনেরাও। এমন অসহনীয় পরিবেশে কীভাবে একজন রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ভাগাড়টি থেকে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বর্জ্য অপসারণ না করায় বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আগুন দিয়ে সেগুলো প্রায়ই পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এর মানে দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের যে নীতিমালা রয়েছে, তার কোনো কিছুই এখানে অনুসরণ করা হচ্ছে না। হাসপাতালটি থেকে দিনে এখন তিন-চার মেট্রিক টন করে বর্জ্য বের হয়। অথচ এক হাজার শয্যার হাসপাতালটিতে নিজস্ব কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই।

প্রথম আলোর প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হাসপাতালের অবকাঠামো উন্নয়নের দেখভালে আছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তাদের কাছে প্রস্তাব পাঠালে ও বরাদ্দ চাইলে হাসপাতালের নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু সে কাজটি কেউ করছে না। ফলে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। হাসপাতালের নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হোক। তার আগে করোনা ইউনিটের সামনে থেকে অতি দ্রুত বর্জ্যের ভাগাড়টি অপসারণ করা হোক।