মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা

সম্পাদকীয়

সড়কপথে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে সম্প্রতি মোটরসাইকেলের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। শুধু রাজধানী শহরে নয়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও দূরদূরান্তে যাত্রী পরিবহনের কাজে মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হচ্ছে।

জাতীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তবে এর মাশুলটাও বেশ চড়া, দেশব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনার সামগ্রিক চিত্রে সেটাই প্রতিফলিত হচ্ছে। মোট সড়ক দুর্ঘটনার শিকার যানবাহনের মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যাই এখন সবচেয়ে বেশি।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নামের এক বেসরকারি সংস্থা সাতটি জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও টিভি চ্যানেলে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে এ বছরের জানুয়ারি মাসে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, নতুন বছরের প্রথম মাসটিতে ১৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৮ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। এর আগের বছরের জানুয়ারি মাসে ৮৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১০৩ জন নিহত হয়েছিলেন। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৭৮ শতাংশ আর প্রাণহানি বেড়েছে ৬৩ শতাংশ।

এ দেশে মোটরসাইকেলে চলাচল নতুন কিছু নয়; মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাও নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দুর্ঘটনার হার এমন উদ্বেগজনক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, ভাড়ার বিনিময়ে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন অনেক বেড়েছে। এটি যুবসমাজের একটি অংশের জীবিকা উপার্জনের উপায় তথা পেশা হিসেবে বিকশিত হচ্ছে। এই পর্যায়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার উচ্চ মাত্রা বিশেষ উদ্বেগের বিষয়। দেশের শ্রমশক্তির সবচেয়ে উৎপাদনক্ষম অংশ যুবসমাজ; অথচ দুঃখজনকভাবে তাদের মধ্যে বেকারত্বের হার খুব বেশি। এ অবস্থায় যখন নানা ধরনের বিকল্প জীবিকার সন্ধান চলছে, তখন এটা নিশ্চিত করা দরকার যে তাদের জীবিকা নিরাপদ হবে।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে, মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ ঝুঁকি কমাতে হলে ব্যক্তিগত ও সরকারি উভয় পক্ষে কতগুলো দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। প্রথমত, মোটরসাইকেলচালকদেরই বুঝতে হবে যে ট্রাফিক আইনের সব বিধান মেনে সতর্কতার সঙ্গে মোটরসাইকেল না চালালে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই দুর্ঘটনার প্রথম শিকার নিজেকেই হতে হয়। তাতে মৃত্যু ঘটতে পারে, সৌভাগ্যক্রমে তা না ঘটলে এমন অঙ্গহানির আশঙ্কা থাকে, যাতে সারা জীবনের জন্য কর্মক্ষমতা হারাতে হতে পারে। দ্বিতীয়ত, মোটরসাইকেলচালকদের ট্রাফিক আইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে ট্রাফিক পুলিশকে তৎপর হতে হবে। লাইসেন্সহীন ও ত্রুটিপূর্ণ মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। মোটরসাইকেলের চালক ও অন্য আরোহীকে অবশ্যই হেলমেট পরতে হবে; ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে সড়কে বেরোতে পারবেন না—এটা নিশ্চিত করা দরকার; ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়াটিও যথাযথ হওয়া দরকার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা।