সিলেট নগরীর কেন্দ্রীয় এলাকায় যানজট বেড়ে গিয়ে এক দুর্ভোগময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে সিলেট সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশ উদ্যোগী হয়েছে। প্রথমে চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার-বন্দরবাজার সড়কে রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারপর ওই সড়কে অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে গত রোববার সারা দিন অভিযান চালানো হয়েছে। ফলে সেদিন ওই এলাকায় যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে।
এ ধরনের পদক্ষেপ সাধারণত সাময়িক হয়ে থাকে এবং সে কারণে টেকসই হয় না; ফলে কিছুদিন পরই যানজট ও বিশৃঙ্খলা আগের অবস্থায় ফিরে এসে হতাশা সৃষ্টি করে। কিন্তু সিলেটে এবার খানিকটা ব্যতিক্রম লক্ষ করা যাচ্ছে। উল্লিখিত রাস্তাসহ নগরীর কেন্দ্রীয় এলাকায় রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করার আগে ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়েছে। যাঁরা ফুটপাতে অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করতেন, তাঁরা যেন জীবিকার তাগিদে কিছুদিন পরই আবার ফিরে না আসেন, সে জন্য তাঁদের অন্যত্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা খুবই সমীচীন কাজ; তাঁদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না করে ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করা হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁরা জীবিকার সংকটে পড়ে যেতেন। তবে যেহেতু দেশের প্রতিটি শহর-বন্দরে জনসংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে এবং মানুষ জীবিকার সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসছে, সেহেতু লক্ষ রাখতে হবে, ফুটপাতগুলো যেন জীবিকার সন্ধানে নতুন আসা লোকদের দ্বারা আবার বেদখল হয়ে না যায়।
সড়কের যানজটের জন্য শুধু রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়িই দায়ী এমন নয়, ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের বিশৃঙ্খল চলাফেরাও ব্যাপকভাবে দায়ী। যানজটের আরও একটা বড় কারণ সড়কের দুই পাশে যানবাহন পার্ক করে রাখা। এই অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে সিলেটের ট্রাফিক পুলিশ গত রোববার যে অভিযান চালিয়েছে, তা এখন পর্যন্ত বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। অবৈধ পার্কিং বন্ধ করার পাশাপাশি যানবাহন চলাচলে ট্রাফিক আইনের সব নিয়মকানুন মেনে চলা নিশ্চিত করা দরকার। সে জন্য মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো ও জরিমানা আদায় যথেষ্ট নয়; নিয়মিত নজরদারি চালিয়ে যেতে হবে।
কোনো নগরে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য শুধু সিটি করপোরেশন/পৌরসভা ও ট্রাফিক পুলিশের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, নগরের বাসিন্দাদের সক্রিয় সহযোগিতাও বিশেষভাবে প্রয়োজন। সিলেটের এই প্রয়াস সফল ও টেকসই হলে এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে দেশের সব ছোট-বড় শহরে যানজট নিরসন করা সম্ভব হবে।