রংপুরে মাঠ আছে, খেলা নেই

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে সবকিছুই অদ্ভুত। কোথাও মাঠের অভাবে ছেলেমেয়েরা খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। আবার কোথাও মাঠ আছে কিন্তু সেই মাঠে খেলার আয়োজন নেই। উদ্যোক্তাদের গাফিলতিতে খেলার মাঠগুলো অলস পড়ে থাকে।

রংপুর থেকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিনিধির পাঠানো খবরে বলা হয়, রংপুরে ক্রিকেট-ফুটবলের পাশাপাশি ভলিবল, কাবাডি, হ্যান্ডবলেরও অনেকগুলো ক্লাব আছে। কিন্তু সেখানে নিয়মিত খেলার প্রতিযোগিতামূলক আসর বসে না। ক্লাবগুলো নিষ্ক্রিয়। শখের বশে বা পেশাদারি মনোভাব নিয়ে যাঁরাই এসব খেলার অনুশীলন করেন, তাঁদের তা করতে হয় নিজেদের চেষ্টায়।

এ বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও ক্লাবগুলো একে অপরকে দোষারোপ করছে। রংপুর বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি বলছেন, ক্লাবগুলো তাদের সহযোগিতা করে না। অন্যদিকে ক্লাবের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ক্রীড়া সংস্থার অনীহার কারণে খেলা হচ্ছে না। একে অপরকে দোষারোপ করে সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে না। ক্লাবের কর্মকর্তারাই যখন ক্রীড়া সংস্থায় প্রতিনিধিত্ব করছেন, তখন তাঁরা সংস্থাকে বাধ্য করছেন না কেন?

রংপুর স্টেডিয়ামেই ভলিবলের ১০টি (পুরুষ) ক্লাব অনুশীলন করে। আটটি করে আছে পুরুষ ও মহিলাদের হ্যান্ডবল ক্লাব। কাবাডিতে পুরুষদের ক্লাব আছে ১২টি। তবে হকির কোনো ক্লাব নেই। খেলা না থাকায় অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দেরও অলস বসে থাকতে হয়। তারা মাঝেমধ্যে মাঠে আগ্রহী হকি খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেন। একসময় মহিলা হ্যান্ডবল খেলায় জাতীয় দলে রংপুর থেকে ১৪ খেলোয়াড়ই অংশগ্রহণ করেছিলেন। মহিলা ভলিবলেও জাতীয় দলে রংপুর থেকে পাঁচ খেলোয়াড় ছিলেন। জেলার সদ্যপুষ্করিণী যুব স্পোর্টিং ক্লাব নিজেদের উদ্যোগে রাগবি খেলার আয়োজন করে। নিজেদের চেষ্টা ও অর্থায়নে রাগবির অনুশীলন হচ্ছে। এতে সাফল্যও এসেছে।

একইভাবে ক্রিকেট, ভলিবল, ফুটবল, কাবাডির ক্লাবগুলোও এগিয়ে আসতে পারে। একসময় ফুটবলে বাংলাদেশের সুনাম ছিল। প্রতিটি জেলা থেকে দু-চারজন ভালো খেলোয়াড় তৈরি হতো। কিন্তু এখন ফুটবলের মান অনেক কমে গেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দূরে থাক, এশিয়াতেও আমাদের স্থান নিচের দিকে।

খেলাধুলায় তরুণদের আকৃষ্ট করতে ক্লাবগুলো পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে। ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের মেয়েরা যে ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা হলো, তার পেছনে ছিল একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা। এভাবে প্রতিটি বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। করোনা একসময় চলে যাবে। এরপর নিয়মিত রংপুরে নিয়মিত খেলার আসর বসবে, এ আশা নিশ্চয়ই সেখানকার ক্রীড়ামোদীরা করতে পারেন।