রাখাইনদের সম্পত্তি বেহাত

গোটা দেশে পাহাড় থেকে সমতল—কোথাও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জায়গাজমি দখলবাজদের থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এ নিয়ে নানা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভেও কোনো কাজ হচ্ছে না। যুগ যুগ ধরে আগলে রাখা বসতভিটা, আবাদের জমি সংকুচিত হয়ে পড়ছে তাদের। সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল ও সিলেটের পর পটুয়াখালীতেও এমন ঘটনা সামনে এল। জেলার কুয়াকাটায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রাখাইনদের দেবোত্তর সম্পত্তি বেদখল শুরু হয়েছে। করোনা মহামারিতে যেখানে জনজীবন বিপর্যস্ত, সেখানে এমন কর্মকাণ্ড নতুন উদ্বেগ তৈরি করে।

গতকাল প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রাখাইনদের পুরোনো বৌদ্ধমন্দির, মন্দিরের মঠ ও ঠাকুরবাড়ির দেবোত্তর সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় ঢাকার এক আবাসন ব্যবসায়ীর লোকজন এ দখলদারির সঙ্গে জড়িত। ইতিমধ্যে দখলদারেরা দেবোত্তর সম্পত্তিতে প্রাচীর ও পাকা স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছে।

কুয়াকাটায় ৯৯ শতাংশ জমির ওপর প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো এ সম্পত্তিতে একসময় কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার ছিল। এখানে ২০ ফুট লম্বা শায়িত বুদ্ধমূর্তি রয়েছে। পাশেই রয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের মহাশ্মশান। মন্দিরটির চারদিকের জমি দখল করে নেওয়া হচ্ছে। মাঝখানে মন্দিরের মঠগুলো কালের সাক্ষী হয়ে এখনো কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে। বালু ফেলে এর মধ্যে গোটা জমির ২০ শতাংশ জায়গা ভরাট করে ফেলা হয়েছে। সেখানে সেমি পাকা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।

আবাসন প্রতিষ্ঠানটি বলছে, তাদের প্রতিষ্ঠান রাখাইনদের সম্পত্তি দখল করেনি। রাখাইনদের সম্পত্তির খতিয়ান এবং তাদের জমির খতিয়ান ভিন্ন। রাখাইনদের দেবালয় দখলের প্রশ্নই ওঠে না। অন্যদিকে রাখাইনদের মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটি বলছে, সেসব জায়গা রাখাইনদেরই। পুরোনো বৌদ্ধমন্দির ও ঠাকুরবাড়ির দেবোত্তর সম্পত্তি জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে পেশিশক্তির জোরে দখল করে নেওয়া হচ্ছে। এতে সহায়তা করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

প্রথম আলোর প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে প্রবেশের আগেই রাখাইনদের এ এলাকা। প্রভাবশালী মহল ছাড়াও রাখাইনদের কিছু ব্যক্তি আবাসন প্রতিষ্ঠানটির লোভের ফাঁদে পা দিয়েছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীটির ইতিহাস-ঐতিহ্য জড়িত এবং তাদের জীবনধারা, সংস্কৃতি কুয়াকাটাকে সমৃদ্ধ করেছে। ফলে দেবোত্তর সম্পত্তির এ জায়গা রক্ষা করা জরুরি। এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, রাখাইনদের দেবালয়ের জমি চিহ্নিত হওয়ার আগপর্যন্ত সেখানে সব কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উভয় পক্ষকে সম্পত্তির কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা চাই স্বার্থান্বেষী মহলের পক্ষে যায়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না আসুক। রাখাইনদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের জায়গাটি রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হোক।