রাজশাহীতে জলাবদ্ধতা

রাজশাহী অঞ্চলে জলাবদ্ধতাজনিত এক অভাবনীয় সংকট তৈরি হয়েছে। একশ্রেণির প্রভাবশালী মানুষ অন্যের সুযোগ-সুবিধার কথা একেবারেই বিবেচনা না করে মাছ চাষ শুরু করেছেন। ‘মৎস্য উন্নয়নের’ প্রশ্ন থাকায় প্রথমে অনেকেই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছিল। অথচ তখনই প্রশাসনের তরফে বাধা দেওয়া উচিত ছিল। কারণ, তারা জানত, সরকারের আগাম অনুমতি ছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। যদি কোনো কারণে রকম পরিবর্তন করা লাগে, তবে অবশ্যই জমিসংশ্লিষ্টদের প্রশাসনের অনুমতি লাগবে।

বর্তমানে যত্রতত্র পুকুর খননে কৃষিজমি ব্যাপক হারে কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। এক হিসাবে রাজশাহীতে গত পাঁচ-সাত বছরে অন্তত পাঁচ হাজার পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে প্রায় ১৫ হাজার বিঘা কৃষিজমি হ্রাস পেয়েছে। পুকুরের মাটিতে উঁচু পাড় তৈরি হচ্ছে। এর ফলে পানিনিষ্কাশনের সব প্রাকৃতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পুকুরের পাড়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে এলাকায় বর্ষার পানি আর নামছে না। বিলেও পানি আটকে আছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ পান ও সবজি কৃষকেরা অব্যাহতভাবে প্রতিবাদ করছেন। কিন্তু প্রশাসন এর প্রতিকারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত আছে।

পানের বরজসহ সব ধরনের সবজিচাষির সর্বনাশ ডেকে এনেছে জলাবদ্ধতা। কৃষি বিভাগই স্বীকার করছে যে শতাধিক পানচাষির কোটি টাকা দামের পানের বরজ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। অভাব-অনটনে থাকা একজন পানচাষি আত্মহত্যা করেছেন। আর আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবার রাজশাহীর বিস্তীর্ণ এলাকায় কোনো ধরনের সবজিই উৎপন্ন হবে না। এ পরিস্থিতি আকস্মিকভাবে সৃষ্টি হয়নি। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের নাকের ডগায় বছরের পর বছর একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি যত্রতত্র পুকুর খনন করেছেন।

২৩ সেপ্টেম্বর জলাবদ্ধতার সংকট নিয়ে আমরা কথা বলি রাজশাহী বিভাগের কমিশনার হুমায়ন কবীর খন্দকারের সঙ্গে। তিনি বললেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন হলো তিন ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। এ বিষয়ে তাঁরা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সচেতন রাখছেন। কিন্তু যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয় যে যাঁরা আইন অমান্য করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এযাবৎ কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তখন তিনি তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে, জলাবদ্ধতার সংকট সম্পর্কে রাজশাহীর প্রশাসন নির্লিপ্ত রয়েছে। অবিলম্বে প্রশাসনের উদ্যোগে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবন করতে হবে। পুকুরের পাড়গুলো কেটে দিতে হবে এবং আইন লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। যাঁর যখন খুশি, তখন তিনি তাঁর জমির ধরন বদলে দেবেন। আর প্রশাসন তাঁদের ‘নিরুৎসাহিত’ করার নামে মৃদু তিরস্কার করবে, এটা অপরিকল্পিত পুকুর খননের হিড়িক রোধ করবে না। কিছু ‘রুই-কাতলার’ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ‘চুনোপুঁটিদের’ নিবৃত্ত করতে সহায়ক হবে।