রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন

সম্পাদকীয়

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ৬ শিশুসহ ১১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এই মৃত্যু কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আমরা স্বজন হারানো শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আরও অনেকে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানানো হয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার থেকে উৎপীড়িত হয়ে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। সেই থেকে তারা কুতুপালং, বালুখালীসহ বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে আছে। গত সোমবার বেলা তিনটার দিকে বালুখালী ৮ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের একটি ঘর থেকে আগুন লাগে। একপর্যায়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে শিবির লাগোয়া ৮-ডব্লিউ ও এইচ, ৯ ও ১১ নম্বর শিবিরেও।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছুদ্দৌজা বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আগুনের ঘটনায় প্রায় ১০ হাজার ঘর পুড়ে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গারা বলেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় লোকজন ও রোহিঙ্গারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। খবর পেয়ে রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আসে এবং কয়েক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ রফিক ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, বিকেলের দিকে আগুন লাগার পর দ্রুতই তা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় স্থানীয়ভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের চারটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে। উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে ভয়াবহ আগুন লাগার পর রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের সরানো হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ ঘর থেকে সরানোর সময়ও অনেকে আহত হয়েছে।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় নেওয়ার পর ছোটখাটো আগুনের ঘটনা ঘটলেও এত বেশিসংখ্যক প্রাণঘাতী আগুনের ঘটনা এই প্রথম। যেসব ঘর আগুনে পুড়ে গেছে, তাতে লক্ষাধিক মানুষ বাস করত, যারা আজ পুরোপুরি বাস্তুহীন।

রোহিঙ্গা শিবিরের ঘরগুলো বাঁশ, খড়, শণ প্রভৃতি দিয়ে তৈরি, যা সহজে দাহ্য। ঘনবসতিপূর্ণ এ ধরনের একটি আশ্রয়শিবিরের জন্য যে ধরনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও প্রস্তুতি থাকা উচিত ছিল, সেখানে ঘাটতি ছিল বলেই ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার একটি কার্যকর তদন্ত এবং ক্যাম্পের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো খুঁজে বের করা জরুরি ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে। এটা মনে রাখতে হবে যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প শুধু একটি জনবসতি নয়, এর সঙ্গে স্থানীয় নানা ইস্যু, রাজনীতি এবং আঞ্চলিক ভূরাজনীতির সম্পর্ক রয়েছে। ফলে তদন্ত হতে হবে নানা দিক বিবেচনায় রেখে।

যেখানে গতকাল ঘর ছিল, সেখানে আজ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে, সড়কের পাশে কিংবা অন্য কোনো জায়গায়। আশ্রয়হীন এতগুলো মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং তারা যাতে স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করা এক বড় চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

অগ্নিকাণ্ডে আশ্রয়হারা রোহিঙ্গারা খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘদিন বাস করতে পারবে না। সামনে ঝড়ের সময় আসছে। যত দ্রুত সম্ভব তাদের জন্য নতুন করে আবাস তৈরি করে পুনর্বাসন করতে হবে। আশ্রয়দাতা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নিশ্চয়ই সেই দায় রয়েছে কিন্তু এ ব্যাপারে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।