রোহিঙ্গা নারীর নিরাপত্তা

বেসরকারি সংস্থা ফাউন্ডেশন সেন্টিনেল এবং পুলিশের সহযোগিতায় বিবিসির অনুসন্ধানী সাংবাদিক দল নিশ্চিতভাবেই একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার দিকে আমাদের নজর আকর্ষণ করেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে রোহিঙ্গা মেয়েশিশুরা যৌনকর্মে ব্যবহৃত হচ্ছে; এটা তাদের পলায়নপর জীবনে একটি ‘নতুন হুমকি’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর আগে উখিয়া থেকে কয়েকজন রোহিঙ্গা তরুণীর পাচারের খবর জানা গিয়েছিল।
পাচারের পাশাপাশি যৌনকর্মে ব্যবহারের এই ‘নতুন হুমকি’ কতটা ব্যাপক তা আরও অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা প্রয়োজন। তবে আঞ্চলিক জেলা প্রশাসন সাধারণভাবে ওই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলার অবনতির অন্যতম উৎস হিসেবে যৌনকর্ম বা সংশ্লিষ্ট অপরাধ সংঘটনকে উল্লেখযোগ্য সমস্যা হিসেবে দেখছে বলে কোনো রেকর্ড নেই।
অবশ্য ওই অঞ্চলটি মাদক চোরাচালানের অন্যতম রুট হিসেবে পরিচিত। মাদকের সঙ্গে অন্যান্য অপরাধের সংযোগ থাকে। সার্বিক বিচারে আমরা প্রথমে যেটা বলব সেটা হলো, রোহিঙ্গা পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি সব কর্তৃপক্ষ ও সংস্থার উচিত হবে বিবিসির প্রতিবেদনকে জেগে ওঠার ঘণ্টাধ্বনি হিসেবে গ্রহণ করা। অবিলম্বে খতিয়ে দেখা দরকার যে বিবিসির প্রতিবেদনে পর্যটন শহর কক্সবাজারে ‘ব্যাপকতার’ যে ইঙ্গিত আছে, তার সত্যতা কত। বিবিসি বলেছে, রোহিঙ্গা সংকটের ফলে বাংলাদেশের নারী ও শিশু পাচার বেড়েছে।
নারী ও শিশু পাচারের আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান কম নাজুক নয়। রোহিঙ্গা সংকট গভীরতর হওয়ায় পাচারকারীরা আরও সক্রিয় হয়ে থাকতে পারে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা শিশুদের ঢাকা, চট্টগ্রাম, কাঠমান্ডু ও কলকাতায় পাচার করা হয়েছে। কলকাতার যৌন ব্যবসায় তাদের ভারতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে, তারা সেখানে মিশে যাচ্ছে, তাদের পরিচয় মুছে যাচ্ছে।
এ রকম ঘটনা কী মাত্রায় ঘটেছে বা ঘটছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয় থাকার কোনো সুযোগ নেই। শুধু বাংলাদেশ সরকারকেই নয়, এই সমস্যা এমনই যে এখানে উভয় দেশের সীমান্ত কর্তৃপক্ষকে যৌথভাবে এই সমস্যার সমাধান বের করতে হবে।
ঢাকার সাইবার ক্রাইম ইউনিটের পুলিশ ইন্টারনেট ও ফেসবুক ব্যবহার করে পতিতাবৃত্তি বৃদ্ধির বিষয়েও বিবিসিকে উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই যে ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি ও পতিতাবৃত্তির ঝুঁকি সার্বিকভাবে আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ বয়ে এনেছে।
এখন বিপন্ন রোহিঙ্গা মেয়েশিশুদের ব্যবহারের যে বিপদ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে, তা গোড়াতেই দক্ষ ও শক্ত হাতে প্রতিরোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা আশা করি, আমাদের সংস্থাগুলো এসব বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।