লকডাউন শিথিল ও ছুটি বাড়ানো

সরকার চলমান সাধারণ ছুটির মেয়াদ সপ্তমবারের মতো বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এবার ১৬ মে নয়, ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি চলবে। এ সিদ্ধান্ত চলমান কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ বলে মনে হয়। যেহেতু নভেল করোনাভাইরাস অতি মাত্রায় ছোঁয়াচে, এই ভাইরাস যেহেতু এক মানুষের দেহ থেকে অন্য মানুষের দেহে সংক্রমিত হয় শারীরিক সংস্পর্শ ও নৈকট্যের মাধ্যমে, তাই সংস্পর্শ ও নৈকট্য এড়াতে সাধারণ ছুটি বাড়ানোর বিকল্প নেই।

কিন্তু সরকার ১০ মে থেকে সব ধরনের দোকানপাট খুলে দিয়েছে। রাস্তাঘাটে, বাজারে, বিপণিবিতানে লোকজনের চলাচল বেড়ে গেছে। কর্মজীবী মানুষ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজধানী ঢাকার দিকে ছুটতে শুরু করেছেন। ফেরিঘাটে গাদাগাদি ভিড়ের সচিত্র খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অর্থনীতির বিপর্যয় ঠেকানোর উদ্দেশ্যে লকডাউন শিথিল করার কথা বলা হচ্ছে বটে; কিন্তু আসলে শিথিল নয়, কার্যত লকডাউন যেন উঠে গেছে।

মার্চের ২৬ তারিখ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা এবং তার মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানোর উদ্দেশ্য যদি হয় লোকজনকে ঘরে রাখা, তাহলে একই সঙ্গে লকডাউন শিথিল করা ও দোকানপাট খোলায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অর্থ কী? এ দুই সিদ্ধান্ত যে পরস্পরবিরোধী এবং এর ফলে ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর উদ্দেশ্য যে ব্যর্থ হবে, তা সাধারণ জ্ঞানেই বোধগম্য। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা এর আগেও এ রকম পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তার ফলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। যেমন গণপরিবহন বন্ধ না করেই ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ গণপরিবহনে গাদাগাদি করে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছে। তার কিছুদিন পর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হতে শুরু করে।

ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সরকারি তরফে বলা হয়েছে, এই ছুটি চলাকালে ঈদুল ফিতরের আগের চার দিন ও পরের দুই দিন ভোগ্যপণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত যানবাহন ছাড়া সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। যে ব্যক্তি যে স্থানে অবস্থান করছেন, তাঁকে সেখানেই ঈদ পালন করতে হবে। এটা অবশ্যই ভালো কথা, খুবই দরকারি নির্দেশনা। কারণ, লোকজনের এক জনপদ থেকে অন্য জনপদে যাওয়া-আসার মাধ্যমেই করোনাভাইরাসের স্থানান্তর ঘটে, সংক্রমণ এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ যেসব এলাকায় সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি, সেখান থেকে সংক্রমিত লোকজন দেশের বাড়িতে যাওয়ার পর তঁাদের কারও কারও পরিবারের সদস্যরাও সংক্রমিত হয়েছেন এবং অনেক খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

সুতরাং গণপরিবহন বন্ধ থাকবে—এই ঘোষণা প্রচার করেই দায়িত্ব শেষ হবে না, সিদ্ধান্তটি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এবং বস্তুত শুধু ঈদের আগে-পরের সাত দিন নয়, মহামারির প্রকোপ দৃশ্যমানভাবে কমে না আসা পর্যন্ত আন্ত–এলাকা গণপরিবহন বন্ধ রাখা উচিত। অন্তত ৩০ মে পর্যন্ত এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের পরিবহন চালু রেখে মানুষ চলাচলের সব পথ রুদ্ধ রাখা দরকার। এই সময়টা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ; সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বাড়ছে। ফলে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রয়োজনও বেড়েছে।