শতবর্ষী স্থাপনাটি সংস্কার করা হোক

সম্পাদকীয়

জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেছে বহু আগে। তবে অনেক জায়গায় তাঁদের নিদর্শনগুলো এখনো থেকে গেছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিশাল বিশাল দিঘি-পুকুর। মানুষের পানির সংকট দূর করতে এসব জলাশয় তৈরি করা হতো।

দেশের বড় দিঘি-পুকুরগুলোর ইতিহাস ঘাঁটলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো না কোনো জমিদারির কথা জানা যায়। তবে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে আছে ছোট একটি পুকুর, যেটি গোলপুকুর নামে পরিচিত, সেটিও তৈরি করেছিলেন ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী নামের একজন জমিদার।

সৌন্দর্যপিপাসু হওয়ায় নান্দনিকভাবে এই পুকুর গড়েছেন তিনি। নানা সময়ে সংস্কার হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ পুকুরের সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। সেটিকে দেখলে এখন ডোবা বললেও ভুল হবে না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বর্তমানে উপজেলা পরিষদের সীমানার ভেতরে পড়েছে এ গোলপুকুর। মাটির সমতল থেকে ধাপে ধাপে পুকুরের গভীর পর্যন্ত নেমে গেছে বৃত্তাকার সিঁড়ি। চারদিকে রয়েছে শানবাঁধানো ঘাট। জমিদারি বিলুপ্তির পর জমিদারেরা চলে গেলে পুকুরটিও জৌলুশ হারিয়েছে। অযত্ন-অবহেলায় সেটির পানি শুকিয়ে গেছে।

ঘাস ও কচুরিপানার স্তূপের কারণে পুকুরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই দায় এখন। চারদিকে আবর্জনার কারণে মশার উপদ্রবে সেখানে দাঁড়ানোই যায় না। অথচ উপজেলা সদরে ও আশপাশে মানুষের বৈকালিক ভ্রমণ ও বিনোদনের স্থান না থাকার কারণে একসময় অনেকে গোলপুকুর এলাকায় ঘুরতে আসতেন।

২০০৭ সালে সর্বশেষ গোলপুকুরটি সংস্কার হয়েছিল। শানবাঁধানো ঘাট ও সিঁড়ি সংস্কার করা হয়। বসানো হয় পানির ফোয়ারা। সারা বছর পানি ধরে রাখার জন্য সেচের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। চারপাশে আলোকসজ্জা যুক্ত করা হয়, লাগানো হয় ঘাস ও নানা জাতের ফুলের চারা। কিন্তু শুধু সংস্কার করলেই তো হয় না, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও জরুরি।

দুঃখজনকভাবে এ দেশে সেই কাজটি তেমনটি হয় না, গোলপুকুরের দিকে তাকালে সেটি ভালোভাবেই বোঝা যায়। গৌরীপুরের বাসিন্দা প্রাবন্ধিক রণজিৎ কর বলেন, ‘এটি একটি শতবর্ষী স্থাপনা। গোলপুকুরের নির্মাণশৈলী সাধারণ মানুষকে মুগ্ধ করে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে পুকুরটি সৌন্দর্য হারিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে এটি সংস্কার করে আবারও জৌলুশ ফিরিয়ে আনবে, এটি আমাদের দাবি।’

গৌরীপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পুকুরটি সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি শিগগিরই তিনি গোলপুকুর সংস্কারে উদ্যোগী হবেন। তবে আগেরবারের মতো সংস্কারের পর সেটি যাতে আবারও জৌলুশহীন হয়ে না পড়ে, সেদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। শুধু সংস্কার নয়, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করে ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি সংরক্ষণ করা হোক।