শরীয়তপুরের ১৯ হাজার পরিবার

নদী এক কূল ভাঙলেও আরেক কূল গড়ে। কিন্তু নদীভাঙনে যাঁরা ঘরবাড়ি-জমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই সব কূল হারান। এ কূল হারিয়ে অন্য কূলে আশ্রয় পাওয়ার উপায় থাকে না তাঁদের। গত পাঁচ বছরে শরীয়তপুরে এ রকম ১৯ হাজার পরিবার জমি-জীবিকা হারিয়ে এখন অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু। অন্যের জমিতে, বাঁধে, সরকারি মাঠে ছাপরাঘর তুলে থাকছেন তাঁরা।

এবারের প্রলম্বিত বন্যায় শরীয়তপুরের মতোই অনেক মানুষের জমি চলে গেছে। পদ্মা, মেঘনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের বড় বড় নদ-নদীর তীরে তীরে তাই নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মানুষের মাতম। ভাঙনপ্রবণ জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো দক্ষিণবঙ্গের শরীয়তপুর। দেশের বৃহত্তম দুই নদী পদ্মা ও মেঘনা এ জেলার ওপর দিয়ে আরও ভাটির দিকে নেমে গেছে। পদ্মা প্রবাহিত হয়েছে ৫০ কিলোমিটার আর মেঘনা গেছে ২০ কিলোমিটার। এ ৭০ কিলোমিটার নদীপথের দুই দিকেই অজস্র ঘরবাড়ি নদীভাঙনের শিকার হয়েছে।

নদীভাঙনের কিছু কারণ যেমন প্রাকৃতিক, কিছু কারণের জন্য দায়ী নদীশাসনের সঠিক কিংবা বেঠিক পরিকল্পনা। আবার সব সময় উন্নয়ন ও নদীশাসনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিরূপণ করা কঠিন। তাই কারণ যা-ই হোক, সাধারণভাবে নদীভাঙনের ফলে ভিটেমাটি হারানো মানুষের পুনর্বাসনকে স্থানীয় সরকার ও জেলা প্রশাসন এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ আর ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হিসেবে নিতে হবে। সেতু ও বাঁধ নির্মাণের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের যেভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, শরীয়তপুরের ১৯ হাজার পরিবারও সেভাবে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার দাবিদার।

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাত্র ৪০০ পরিবারকে দুর্যোগসহনীয় বাড়ি দেওয়া হলেও এর বাইরে রয়ে গেছে আরও প্রায় ১৯ হাজার পরিবার। জেলা প্রশাসন সাধারণত অনুর্বর ও পতিত জমিতেই পুনর্বাসন করে। সেসব জমিতে ভালো করে চাষ করা যায় না। জমির বদলে নগদ অর্থ প্রদান করা গেলে বিকল্প বাসস্থান ও আয়রোজগারের ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা নিজেরাই করে নিতে পারেন।

জমি পেলেও বাসস্থান নির্মাণ করা যদি না যায়, তাহলে পুনর্বাসন হয়েছে বলে বলা যায় না। সে কারণে আর্থিক ক্ষতিপূরণের জরুরত মোটেই উপেক্ষা করা যাবে না।

প্রাকৃতিক কারণে কেউ ভাঙনের শিকার হন, তাঁদের প্রতি সরকারের সদয় দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু নদীশাসনের রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের কারণে যদি কেউ নদীভাঙনের শিকার হন, তাঁদের বেলায় ক্ষতিপূরণ একপ্রকার বাধ্যতামূলক। উন্নয়ন ও নদীশাসনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সামলানোর দায়িত্ব হিসেবেই একে দেখা দরকার।