শহরকেন্দ্রে আবর্জনার ভাগাড়

সম্পাদকীয়

স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষা যাদের দায়িত্ব, তারাই যদি উল্টো হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে নাগরিকের দুর্গতির পারদ চড়ারই কথা। কর্তৃপক্ষ যখন স্বেচ্ছাচারকে স্বাধীনতা ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, তখনই রক্ষকরূপী কর্তৃপক্ষ ভক্ষকের ভূমিকায় নামে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পৌর কর্তৃপক্ষের আবর্জনা ব্যবস্থাপনা–সংক্রান্ত তৎপরতা তাদের এ ধরনের স্বেচ্ছাচারী চরিত্রকে সামনে আনছে। সেখানে তারা শহরের প্রাণকেন্দ্রের একটি সুপারমার্কেটের খালি জায়গাকে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, শহরের কোর্ট রোড এলাকাটি কেনাকাটার প্রধান জায়গা। এ এলাকায় সাতটি বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন ব্যাংক, আবাসিক হোটেল, খাবার হোটেল, ফার্মেসি, প্রসাধনসামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান রয়েছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকানও ওই এলাকায় অবস্থিত। তাই একে শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানকার সবচেয়ে বড় বিপণিবিতান সুপারমার্কেট প্রায় দেড় বছর আগে ভাঙা হয়। কয়েক মাস ধরে ওই খালি জায়গায় ময়লা ও আবর্জনা ফেলছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এতে আশপাশের ভবনের বাসিন্দা ও বিপণিবিতানে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। দুর্গন্ধে তাঁরা প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে পারছেন না। ভেঙে ফেলা সুপারমার্কেটের খালি জায়গায় ফেলা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে কয়েকটি ব্যাংকের গ্রাহকেরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অথচ ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য পৌর এলাকার ছয়বাড়িয়ায় রয়েছে নিজস্ব বিশাল জায়গা। আগে সেখানেই ময়লা-আবর্জনা ফেলা হতো। কিন্তু সুপারমার্কেট ভেঙে ফেলার পর পৌর কর্তৃপক্ষ সেখানেও ময়লা-আবর্জনা ফেলছে।

এ রকম একটি ব্যস্ত ও জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ময়লা-আবর্জনা রাখার সিদ্ধান্ত পৌরসভা কীভাবে নিয়েছে, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। নাগরিকের শ্বাসগ্রহণের স্বাধীনতা ব্যাহত করার অধিকার পৌর কর্তৃপক্ষ কোথায় পেল, তা স্পষ্ট হওয়া উচিত। নাগরিক সংগঠনগুলো যদি উদ্যোগ নিত, পুলিশ যদি কর্তব্য করত, জনস্বার্থের প্রশ্নে জনপ্রতিনিধিরা যদি সর্বাংশে নিরপেক্ষ হতেন, তাহলে হয়তো এভাবে আবাসিক এলাকায় পৌরসভা ময়লা ফেলতে পারত না।

এটি শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিষয় নয়। একইভাবে অনেক জেলা শহরে পৌরসভার ময়লা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তে সাধারণ নাগরিকেরা অশেষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। লক্ষণীয়, দু–একজন কর্মকর্তার হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে গোটা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অগ্রাধিকারভিত্তিক নজর দিতে হবে। পৌরসভা যাতে পৌরবাসীর দুর্ভোগের কারণ হতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করায় মন্ত্রণালয় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।