শাহ্‌ মখদুম মেডিকেলের ঘটনা

সম্পাদকীয়

ন্যূনতম শর্ত পূরণ না করায় সরকার রাজশাহী শহরে অবস্থিত শাহ্‌ মখদুম মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে এবং সেখানে পাঠরত শিক্ষার্থীদের অন্য কোনো মেডিকেল কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ এর প্রতিশোধ নেয় কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে। এতে ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হন।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত শুক্রবার কলেজের ছাত্রীরা কাপড়চোপড় নিতে ছাত্রী হোস্টেলে গেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ বাধা দেয় এবং তাঁদের পেটোয়া বাহিনী বাঁশ ও লোহার রড দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পিটিয়ে আহত করে। হামলাকারীরা ছাত্রীদের শ্লীলতাহানিও করেছে বলে অভিযোগ আছে।

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১১ (সংশোধিত) প্রতিপালন না করায় রাজশাহীর শাহ্‌ মখদুম মেডিকেল কলেজে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দুজন পরিদর্শকও মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করেছেন। এর আগের দিন ছাত্রছাত্রীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার উদ্দেশ্য নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকা এবং কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া শাহ্‌ মখদুম মেডিকেল কলেজে প্রথম ব্যাচে ১৮ জন ও দ্বিতীয় ব্যাচে ২৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। সরকার ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমোদন দিলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ ৫০ জনকে ভর্তি নেয়। এ ঘটনায় ২০১৬ সালে ওই বর্ষের কার্যক্রম স্থগিত করে কলেজ কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়। জবাবে সন্তুষ্ট না হওয়ায় ওই শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম স্থগিতই রাখা হয়। বর্তমানে সাতটি ব্যাচে প্রায় ২২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করায় কলেজটি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন পায়নি। ফলে এই কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা চারজন শিক্ষার্থী ইন্টার্নশিপও করতে পারেননি।

একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, যার সঙ্গে চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জড়িত, সেই প্রতিষ্ঠানটি পদে পদে অনিয়ম করে কীভাবে সাত বছর ধরে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল, সেটাই প্রশ্ন। এর উদ্যোক্তা মনিরুজ্জামান ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শের অনুসারী হলেও খুঁটির জোর হলেন সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনিই কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি।

শাহ্‌ মখদুম কলেজ কর্তৃপক্ষের খুঁটির জোর যত প্রবলই হোক না কেন, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার অধিকার তাদের নেই। সরকারের নিয়ম ও শর্ত ভঙ্গকারী এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলতে দেওয়া যায় না।

শাহ্‌ মখদুম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী দুর্বৃত্তদের উচিত শাস্তি হোক।