শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি

সম্পাদকীয়

গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কার্যত বন্ধ আছে। ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি বহাল আছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ছুটি বাড়তে পারে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা গভীর অনিশ্চয়তায় আছেন; যদিও সংকট উত্তরণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একগুচ্ছ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। আমরা আশা করি, শিগগিরই স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও রাজধানীসহ সারা দেশেই নতুন বছরে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটি আনন্দের খবর হলেও অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তি ও পুনঃ ভর্তির নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি ফি নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ১৮ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর নির্দেশনা দিয়েছিল যে বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো (এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন) শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুধু টিউশন ফি নিতে পারবে। অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃ ভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ ফি নিতে পারবে না। কিন্তু রাজধানীর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই মাউশির এ নির্দেশনা মানছে না। নির্দেশনা অমান্য করে তারা ভর্তির সময় অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগ্রিম বেতন নিচ্ছে বলেও সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গ্রন্থাগার ও বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন প্রকাশ, খেলাধুলা ইত্যাদিও বন্ধ আছে। কিন্তু তারপরও এসবের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি নেওয়া কেবল অনৈতিক নয়, বেআইনিও।

মাউশি থেকে আরও বলা হয়েছিল, যদি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এসব খাতে ফি নিয়ে থাকে, টিউশন ফির সঙ্গে তা সমন্বয় করতে হবে। কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তা করেনি বলে অভিভাবকেরা জানিয়েছেন। বিশেষ করে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর ভিড় বেশি থাকে, তাদের মধ্যে আইন না মানার প্রবণতাও বেশি। অতীতে বহুবার মন্ত্রণালয় পরীক্ষা ও ভর্তির বর্ধিত ফি নেওয়া বন্ধ করতে পারেনি। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, রাজধানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফি নেওয়া হয়েছে ১২ হাজার টাকা। তারা বার্ষিক সেশন চার্জ (হাউস রেন্ট, ইউটিলিটি ও অন্যান্য) নামে এই ফি নিয়েছে। একই সঙ্গে তারা দুই মাসের বেতনও নিয়েছে। মিরপুরের মনিপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা নিচ্ছে। এর মধ্যে ভর্তি ফি আট হাজার টাকা, জানুয়ারির বেতন দেড় হাজার টাকা ও অন্যান্য ফি ৫০০ টাকা।

এ কথা সত্য যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখতে হলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি নিতে হবে। তাই বলে করোনাকালে তারা বাড়তি ফি নিতে পারে না। ‘অন্যান্য ফি’ নেওয়ার মাহাত্ম্য কী। আর কাজটি যে কেবল সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে বা মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় করছে, তা নয়। আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি ফি নিচ্ছে।

অতএব, ভর্তির নামে এই ‘অন্যান্য ফি’ আদায় বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাতে মাউশির নির্দেশনা পুরোপুরি মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা ও শিক্ষার্থী উভয়কে বাঁচাতে হবে।