শিশু অপহরণ

চলমান কোভিড–১৯ মহামারির মধ্যে হঠাৎ করে শিশু অপহরণের ঘটনা বেড়েছে। সম্প্রতি এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ছয়টি অপহৃত শিশু উদ্ধারের খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে ফুল বিক্রেতা এক মেয়েশিশু অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে লোপা তালুকদার নামের এক ভুয়া সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়।

ওই ঘটনার রেশ না কাটতেই দুটি শিশু অপহরণের দায়ে আরও তিন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পল্লবী থেকে অপহৃত মিথিলা আক্তারকে উদ্ধার করে র‍্যাব, গ্রেপ্তার করে অপহরণকারী সুমি বেগমকে (৪০)। এ ছাড়া ৫ সেপ্টেম্বর মিরপুর শাহ আলী মাজার এলাকায় খেলা করার সময় তিন বছরের শিশু শাহাদতকে অপহরণের ঘটনায় দুই নারী রাশেদা ও ফাতেমা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে অপহরণের তিন দিনের মাথায় দেড় বছরের শিশু শিফাত মোল্লাকে মঙ্গলবার নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থেকে উদ্ধার করা হয়, অপহরণকারী মো. ফারুকসহ দুজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে ৯ বছরের শিশুকন্যাকে অপহরণের তিন দিন পর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে র‌্যাব। শিশুটিকে আটকে রেখে যৌন নির্যাতন করে পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল অপহরণকারী। এ ছাড়া গাজীপুরে পরিবারের সদস্যদের অজ্ঞান করে অপহরণের ১০ ঘণ্টা পর অপহৃত দেড় বছরের এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত শনিবার ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে চারজন।

শিশু অপহরণ নিষ্ঠুর অপরাধ। এটা প্রতিরোধের জন্য দেশে শক্তিশালী আইন আছে; সরকারি-বেসরকারি নানা সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে কাজ করছে। কিন্তু শিশুর অপহরণ ও শিশুর প্রতি সহিংসতা কমেনি। শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৩৮১টি শিশু বিভিন্নভাবে সহিংসতার শিকার হয়। এ প্রেক্ষাপটে শিশু খুন, ধর্ষণ ও অপহরণের অপরাধগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করার দাবি করে আসছেন মানবাধিকারকর্মীরা।

এ মহামারিকালে দরিদ্র মা–বাবা সন্তানের মুখে খাবার দিতে কাজে বের হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর নজর রাখা উচিত, শিশু অপহরণকারীরা এ পরিস্থিতির সুযোগ নিতে তৎপর হয়ে উঠেছে কি না। শিশু অপহরণকারীদের সংঘবদ্ধ চক্রগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো উচিত। পাশাপাশি অভিভাবকদেরও শিশুদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এ ব্যাপারে পাড়া–প্রতিবেশীদের দায়িত্বও কিন্তু কম নয়।