শিশুদের রক্ষার কঠিন কাজটি করবে কে

সম্পাদকীয়

মাদক সমস্যা এখন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি। মাদক নিয়ন্ত্রণে মূলত বাহকদের গ্রেপ্তার ও সাজাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়, মাদকের মূল কারবারিরা রয়ে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।

যার কারণে মাদকের বিস্তার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এমনকি এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে পথশিশুরাও। ক্ষুধা ও অবহেলিত জীবন নিয়ে হতাশা ভুলে থাকতে তারা শুধু মাদকই নেয় না, রীতিমতো মাদক বহনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকের বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে দেশের ২১ শতাংশ পথশিশুকে। আর ৫৮ শতাংশ পথশিশু কোনো না কোনো মাদক নেয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) এক গবেষণায় এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। দেশব্যাপী ১ হাজার ৬০০ পথশিশুর মধ্যে গবেষণাটি চালানো হয়।

রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে সহজেই একটি দৃশ্য চোখে পড়ে, সড়ক বিভাজকে বা ফুটপাতে পথশিশুরা পলিথিন মুখে নিয়ে মাদক সেবন করছে এবং সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ছে।

সেটি মূলত ড্যান্ডি, এই মাদক সহজলভ্য ও সস্তা। পথশিশুরা ড্যান্ডিতে আসক্ত ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। ড্যান্ডি সেবনে ক্ষুধামান্দ্য তৈরি হয়, সামাজিক বাস্তবতা ভুলে থাকা যায়, যেখানে-সেখানে ঘুমিয়ে পড়া যায়।

তবে সবচেয়ে বেশি আসক্তি গাঁজায়, পথশিশুদের ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ এই মাদকদ্রব্য সেবন করে। সরাসরি মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাদক সংগ্রহ করে তারা। গবেষণায় অনেক পথশিশু জানিয়েছে, তারা ১০ বছর হওয়ার আগে থেকেই মাদক নিচ্ছে।

পথশিশুদের মাদক সেবনের বিষয়টি আমরা দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। ফলে তারা এখন মাদক বহনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এর মাধ্যমে পথশিশুরা এই বয়সেই কিংবা বড় হয়ে অপরাধকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ার বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

গত রোববার আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলছেন, মাদকাসক্তদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ হচ্ছে যৌন অপরাধী। জেলখানায় থাকা ব্যক্তিদের বেশির ভাগই মাদক পাচারকারী কিংবা মাদক ব্যবসায়ী।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দারিদ্র্য ও সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার কারণে পথশিশুদের মাদক বহনে সহজে প্রভাবিত করা যায়। তাদের যারা এ কাজের সঙ্গে যুক্ত করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। যদিও মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি না।

তবে পথশিশুদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনাটাই হবে মূল সমাধান। কিন্তু সেটিই বড় চ্যালেঞ্জের কাজ। বেসরকারি ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে সরকারকে সেই কঠিন কাজটিতে হাত দিতে হবে।