শ্রমিকদের অর্থসহায়তা

সম্পাদকীয়

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মান সরকার বাংলাদেশে কোভিডকালে কাজ হারানো শ্রমিকদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকার একটি তহবিল দান করেছে। আমরা তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদেরই গড়িমসি, অব্যবস্থাপনা ও আন্তরিক তাগিদের অভাবে জীবিকা হারানো শ্রমিকেরা এই অর্থসহায়তা এখনো হাতে পাননি। ১২ নভেম্বর প্রথম আলোয় খবর বেরিয়েছে, শ্রমিকদের সহায়তা করার এই পুরো উদ্যোগই ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কোভিড–১৯ মহামারিকালে, অর্থাৎ ৮ মার্চ থেকে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকাশিল্পের যেসব শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন এবং এখনো কর্মহীন রয়েছেন, তাঁদের মাসে ৩ হাজার টাকা করে তিন মাসে ৯ হাজার টাকা দেওয়ার কাজটি কীভাবে সম্পন্ন করতে হবে, সে বিষয়ে সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় ৭ অক্টোবর একটি নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। তারপর দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় চলে গেছে, কিন্তু কোনো শ্রমিক এই তহবিল থেকে কোনো টাকা পাননি।

কেন? প্রথম কারণ, নীতিমালার অনুসরণে অর্থসহায়তা পাওয়ার যোগ্য শ্রমিকদের তালিকা তৈরির প্রাথমিক দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলোর পাশাপাশি যে চারটি ব্যবসায়ী সংগঠনকে দেওয়া হয়েছে, তারা তা পালন করেনি। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের তালিকা দিয়েছে বটে, কিন্তু ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো এ বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে শ্রমিকদের অর্থসহায়তা প্রদানের কাজটি শুরুই হচ্ছে না। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতার কথা বলছে বলে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রথম আলোকে বলেছেন। সীমাবদ্ধতাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ কেন নেওয়া হচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়। কারখানা বা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শ্রমিকদের চাকরির বিষয়ে সঠিক ও হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করলে কোভিড–১৯ কালে কারা চাকরি হারিয়েছেন, পরে আবার কারা চাকরি ফিরে পেয়েছেন—এসব বিষয় নির্ধারণ করা অবশ্যই সম্ভব। বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁরা কাজ হারানো শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করতে পারছেন না। কারণ, ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকেরা পরে চাকরি ফিরে পেয়েছেন কি না, সে বিষয়ে তাঁদের কোনো তথ্যভান্ডার নেই।

অন্তত বিজিএমইএর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া তালিকা ধরে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের অর্থসহায়তার টাকা প্রদান করা সম্ভব ছিল। কিন্তু শ্রম অধিদপ্তর বলছে, তাদের তালিকাগুলোতে তথ্যগত ত্রুটি–বিচ্যুতি আছে। তাহলে কেন সেসব দ্রুত যাচাই–বাছাই করে শ্রমিকদের অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়।

জীবিকা হারানো শ্রমিকদের অর্থসহায়তা প্রদানের কাজটি যেন তাড়াতাড়ি সম্পন্ন হয়, তা নিশ্চিত করা হোক।