সংক্রমণ কমাতেই হবে

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার উদ্দেশ্যে সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে সারা দেশে এক সপ্তাহের যে লকডাউন ঘোষণা করেছিল, সপ্তাহান্তে তার মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়েছে। ২১ এপ্রিল ঘোষণা করা হয়েছে, লকডাউন চলবে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত। অবশ্য চলাচল সীমিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আরও আগে—৫ এপ্রিল থেকে। যদিও অফিস-আদালত ও কলকারখানা খোলা রয়েছে এবং সে কারণে সম্পূর্ণ লকডাউন সম্ভব হচ্ছে না, তবু যেটুকু হচ্ছে, তাতে লোকসমাগম অনেকটাই কমে এসেছে। ফলে বিপজ্জনক মাত্রার সামাজিক-শারীরিক সংস্পর্শের পরিস্থিতি থেকে সাময়িকভাবে হলেও কিছুটা সরে আসা সম্ভব হয়েছে। এসবের কিছু সুফলও ইতিমধ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার উভয়ই কমতে শুরু করেছে। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা সাত হাজারের ওপরে উঠেছিল, এখন তা কমে চার হাজারের কাছাকাছি নেমে এসেছে।

অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে আমরা যদি আরও কিছুদিন জনসমাগম তথা মানুষে মানুষে সংস্পর্শ এভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাহলে মহামারি পরিস্থিতির আরও উন্নতি ঘটবে: সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয়ই কমে আসবে। সে জন্য ২৮ তারিখ পর্যন্ত ঘোষিত লকডাউন সর্বোচ্চ মাত্রায় সফল করার জন্য সবাইকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে না বেরোনো, কর্মজীবী মানুষদের দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালনার সময় মুখে মাস্ক পরা, পরস্পরের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, ঘন ঘন হাত ধোয়া ও জীবাণুনাশক ব্যবহার করা—স্বাস্থ্যবিধির এই সব নিয়ম মেনে চলতে হবে। সুরক্ষা বাড়বে যদি আমরা প্রত্যেকে স্বাস্থ্যবিধির এই নিয়মগুলোকে প্রাত্যহিক জীবনযাপনের অংশ করে তুলতে পারি, অভ্যাসে পরিণত করতে পারি। বিশেষত, শতভাগ মানুষের মাস্ক ব্যবহারের ওপর সর্বাত্মক গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশে গবেষণা সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত মাস্ক ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেক কম। দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সাফল্যের একটা বড় কারণ মাস্কের ব্যাপক ব্যবহার।

২৮ এপ্রিলের পর লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজন না থাকলে গণপরিবহন ও সব ধরনের দোকানপাট আবার খুলবে। তা ছাড়া সামনে ঈদুল ফিতর, তার আগে দোকানপাট খুলে দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে চাপও আছে। কিছুদিন আগে বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর ছাপা হয়েছিল যে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বিপণিবিতানে যাতায়াতকারী ও গণপরিবহন ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের মধ্যে। সুতরাং লকডাউনের পর এগুলো আবার চালু হলে সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি আবারও বাড়তে পারে। সেটা ঠেকাতে হলে মাস্ক ব্যবহার ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যবসায়ীদের সংগঠন, বিভিন্ন বিপণিবিতানের কর্তৃপক্ষের উচিত নিজ নিজ দোকানপাট, বিপণিবিতানে বেচাকেনার সময় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করা। সবচেয়ে বড় কথা, লকডাউন উঠে গেছে, সংকট কেটে গেছে—এ রকম মানসিকতাকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না। জনসমাগম বাড়লে, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে এলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার গুরুত্ব একটুও কমবে না, বরং আরও বেড়ে যাবে—এটা সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে।

ইতিমধ্যে লকডাউনের সাত-আট দিনে দরিদ্র মানুষের জীবনে বেশ দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে; অনেকের অন্নকষ্ট হচ্ছে। দৈনিক উপার্জনের ওপর নির্ভর করে যাঁদের বেঁচে থাকতে হয়, সেই সব মানুষকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তাই তাঁদের জন্য নগদ অর্থসহায়তার ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন, যেন তাঁরা খাদ্য কিনে প্রাণধারণ করতে পারেন। সরকারি তরফে তো বটেই, বেসরকারি খাত থেকেও সামর্থ্যবান ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের উচিত এখন তাঁদের জন্য কিছু করা।